নিজস্ব প্রতিবেদক।।
মহামারি করোনা ভাইরাসের দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও একজন ব্যক্তি করোনার নতুন ধরন জেএন.১-এ তে আক্রান্ত হতে পারেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, জেএন.১-এর সাব-ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গগুলো অন্যান্য ধরনের মতোই। রোগীদের উপসর্গ মৃদু হলেও জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা এবং হালকা দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব জানার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ জেনোমসিকোয়েন্সিং (ধরণ) এর উপর গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে উপাচার্য এসব কথা বলেন। তিনি এই জেনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কোভিড-১৯ এর জেনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার উদ্দেশ্য হচ্ছে সার্স-কোভি-২- ভাইরাসের জেনোমের গঠন উন্মাচন ও পরিবর্তনের ধরণ এবং বৈশ্বিক কোভিড-১৯ ভাইরাসের জেনোমের সাথে এর আন্তঃসর্ম্পক বের করা, ভাইরাসের বিবর্তনীয় সম্পর্ক, রোগের উপসর্গ, রোগের তীব্রতা, তুলনামূলক হাসপাতাল অবস্থানের মেয়াদকালে এবং বাংলাদেশী কোভিড-১৯ জেনোম ডাটাবেস তৈরি করা। যা গত ২০২১ সালে ২৯ জুন থেকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের উপর এই গবেষণা চলমান।
গবেষনা বলা হয়, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর নতুন জেএন.১ (ঔঘ.১) সাব-ভ্যারিয়েন্ট সনাক্ত হয়েছে। গবেষণায় প্রায় এক হাজার পাচঁশত কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর ন্যাযোফ্যারিনজিয়াল সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। গত জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রাপ্ত কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর স্যাম্পল নিয়ে জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। গবেষণায় মোট তিন জন রোগীর দেহে জেএন.১-এর সাব-ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ , জেএন.১.১৮ এবং জেএন.১.১১.১১ সনাক্ত করা হয়। এছাড়াও জেএন.১ সাব-ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত রোগীদের এক জনের দেশের বাইরে থেকে আসার ইতিহাস রয়েছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে যে, নতুন জেএন.১ সাব-ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত রোগের লক্ষণের তীব্রতা কম। সকল জেএন.১ সাব-ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত রোগীর কমপক্ষে দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া ছিলো। তৃতীয়বারের মতো আক্রান্ত হয়েছে এরকম রোগীরও জেএন.১ সাব-ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। মৃদু উপসর্রে কারণে জেএন.১ সাব-ভ্যারিয়েন্ট রোগীদের থেকে দ্রুত সংক্রমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। জেএন.১ সাব-ভ্যারিয়েন্টএ আক্রান্তদের তুলনামূলক কম উপসর্গ হয় এবং হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা কম। প্রত্যেক করোনা ভাইরাস ভ্যারিয়েন্ট বিপদজনক এবং তা মারাত্মক অনুস্থতা এমনকি মৃত্যুরও কারণও হতে পারে। পাশাপাশি ভাইরাসের নিয়মিত মিউটেশনের আমাদের প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঝুকিপূর্ণ করতে পারে।
অনুষ্ঠানে ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমে আসলেও করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। এই সময়ে আমরা করোনার অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিভিন্ন সাব-ভ্যারিয়েন্ট পেয়ে আসছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই বছরের শুরুতে নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট জেএন১ এর কথা জানায়। এর ভিত্তিতে আমরাও গবেষণা করেছি। আর আমাদের গবেষণায় আমরা মোট তিন জন রোগীর দেহে নতুন এই সাব-ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছি।
উপাচার্য বলেন, তেতুল খেলে ডায়াবেটিস কমে, জলপাইয়ের অনেক উপকারিতা রয়েছে। কচুর লতি, ডুমুর, আনারসের মাথা এরকম অনেককিছু নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ধূমপান, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, চিনি খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। ব্যায়াম অবশ্যই করতে হবে। মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে হবে। করোনা ভাইরাস শেষ হয়ে যায়নি। বাঁচতে অবশ্যই মুখে মাস্ক পড়তে হবে। যারা এখনো করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নেয়নি তারা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
অনুষ্ঠানে এই সময় আরও প্রধান গবেষক জেনোটিক্স এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি ও এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. লায়লা আনজুমান বানু, গবেষণা টিমের সদস্য ডা. মো. মহিউদ্দিন মাসুম, ডা. শারমিন আক্তার সুমি, ডা. শরদিন্দু কান্তি সিনহা, সোয়েব হোসেন, শ্যামল চন্দ্র বিশ্বাস ,অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. জাহিদ হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।