নিজস্ব প্রতিবেদক।।
২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে এ বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।আর নতুন বছরে প্রথম দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৫ জন। তবে বিদায়ী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে রাজধানীসহ সারা দেশেই ছিল ডেঙ্গু রোগের অপ্রতিরোধ্য সংক্রমণ।
এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১২ দশমিক ৩ শতাংশ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ১১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ি ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকার দুই সিটিতে বর্ষা-পরবর্তী এডিস মশার লার্ভা বা শূককীট জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বরের থেকে ১৮ তারিখ ঢাকার দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডে বর্ষা পরবর্তী লার্ভা জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। উত্তর সিটির ৪০টি ও দক্ষিণের ৫৯টি ওয়ার্ডে মোট ৩ হাজার ২৮৩টি বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি।
মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্স বা বিআই সূচকের মাধ্যমে। বিআই প্রতি একশ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০ টি বা তার বেশিতে যদি এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়, তাহলে সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা যায়। আর হাউজ ইনডেক্স যদি প্রতি একশ প্রজনন উৎসের ১০ টি হয় তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবছর বর্ষা-পরবর্তী জরিপে উত্তর সিটির ১৩ দশমিক ৪ ও দক্ষিণের ১৪ দশমিক ৬ বিআই পাওয়া গেছে। উত্তরে সর্বোচ্চ বিআই ছিল ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও দক্ষিণে ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ বিআই পাওয়া গেছে।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলায় হয়, দেশে বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৮৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ২৬ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
অধিদফতরের তথ্যমতে, গত বছরের ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল চলতি বছরে ডেঙ্গু-আক্রান্ত হয়ে মোট ভর্তি হয়েছেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন । এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ১ লাখ ১০ হাজার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন। আর চলতি বছরে মোট হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন ৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু বিষয়ক তথ্য থেকে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারি মাসে ৫৬৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এবং ছয় জন মারা গেছেন। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ এবং মৃত্যু ৩ জন, মার্চে আক্রান্ত ১১১ জন এবং কেউ মারা যায়নি। এপ্রিলে আক্রান্ত ১৪৩ এবং মৃত্যু দুই জন, মে মাসে আক্রান্ত এক হাজার ৩৬ জন এবং মৃত্যু দুই জনের, জুন মাসে আক্রান্ত পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন, মৃত্যু ৩৪ জন। আর ২০২৩ সালের জুলাই মাসে আক্রান্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং ২০৪ জনের মৃত্যু হয়। আগস্ট মাসে আক্রান্ত ৭১ হাজার ৯৭৬ জন এবং মৃত্যু ৩৪২ জন, সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন ও মৃত্যু ৩৯৬ জন। অক্টোবর মাসে আক্রান্ত ৬৭ হাজার ৭৬৯ জন এবং মৃত্যু ৩৫৯ জন, নভেম্বরে আক্রান্ত ৪০ হাজার ৭১৬ জন এবং ২৭৪ জনের মৃত্যু হয়। ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট নয় হাজার ২৮৮ জন এবং ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৫৮ শতাংশে বয়স ১৬ থেকে ৪০ বছর। এর বয়সে মারা গেছে মোট মৃত্যুর ৪১ শতাংশ। যাদের বেশিরভাগেই কর্মজীবি ছিল।ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী ও ৬০ শতাংশ পুরুষ ছিল। আর মৃতদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ নারী, ৪৩ শতাংশ পুরুষ ছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ঢাকায় ৩৪ ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েছে, ৬৬ শতাংশ চিকিৎসা নিয়েছে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা হাসপাতালে।