এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত নারীর মৃত্যু, ব্যাখ্যা দিলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।। 

সানজিদা আক্তার (৩০) নামের এক নারীর শরীরে হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচএমপি) শনাক্ত প্রথম রোগী রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ৩০ বছর বয়সী ওই নারী গত শুক্রবার থেকে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে নিবিঢ় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ওই চিকিৎসক বলেন, “এইচএমপি ভাইরাস ছাড়াও তার আরও কিছু শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এ অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি।

গত রোববার আইইডিসিআরের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ নওশের আলম  বলেন, “আমরা এইচএমপিভি আক্রান্ত একজন রোগী শনাক্ত করেছি। তিনি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এদিকে,  এইচএমপি ভাইরাসে আক্রান্ত নারীর নিউমোনিয়া ছাড়াও মাল্টি অর্গান ফেইলরের (একাধিক অঙ্গের নিষ্ক্রিয়তা) কারণে মৃত্যু হয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি। এইচএমপি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে  বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সানজিদা আক্তার (৩০) নামের এক নারী।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‌‌‘যিনি মারা গেছেন তিনি বাসার আশেপাশে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তার অবস্থার অবনতি হলে একমাস পর তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে আসেন। তাকে অ্যান্টিবায়োটিক ও অক্সিজেন দেওয়া হয়। আরও চারদিন পর তার আরেকটু অবনতি হয়। এরপর তাকে পরীক্ষা করা হয়। তখন দেখা যায় যে, তার এইচএমপি ভাইরাস পজিটিভ।’

তিনি বলেন, ‘ওই নারীর মাল্টি অর্গান ফেইলরের কারণে মৃত্যু হয়েছে। তার নিউমোনিয়া ডেভেলপ করেছিল। শরীরে একটি ভাইরাস ও একটি ব্যাকটেরিয়া ছিল।’

‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় একজন এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। তাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছিল এবং উন্নতির কারণে তাকে আবার ভেন্টিলেশন থেকে ফিরিয়ে আনাও হয়েছিল। এরপর আবার অবস্থার অবনতি হয়। মৃত্যুর কারণে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

বিশেষ সহকারী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিজ্ঞান যেটুকু বলেছে- এইচএমপি ভাইরাসের কারণে মৃত্যু বিরল। তবে এইচএমপি আক্রান্ত ব্যক্তির যদি অন্যান্য রোগ থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, অল্প বয়সী শিশু ও বেশি বয়সী মানুষ, সিওপিডি অ্যাজমা থাকে- তাদের কিছুটা ঝুঁকি থাকে।’

তিনি বলেন, ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত রোগীদের একটা অংশ সবসময়ই এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত থাকে। তবে এইচএমপি ভাইরাস কখনোই সাধারণভাবে মৃত্যুর কারণ হয় না।’

এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞান এইচএমপিভির কারণে সরাসরি মৃত্যু হওয়ার কথা বলেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটিতে মৃত্যুর হার খুবই কম। এক হাজারে একজন বলা হয়। তবে সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে তাও না।’

ফলে এইচএমপি ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও জানান বিশেষ সরকারী।

এ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘বিজ্ঞান পরবর্তীতে নির্ধারণ করবে, এই ধরনের মৃত্যুগুলোকে কীভাবে ক্যাটাগরাইজ করা হবে। এইচএমপি ভাইরাসে মৃত্যুর কোনো ক্যাটাগরি এখন পর্যন্ত করা হয়নি।’

এ ভাইরাসের ভ্যাকসিন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গবেষণাধীন দু-একটি ভ্যাকসিনের কথা শোনা যায়। এটি ভ্যাকসিন আকারে আসার সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে নেই।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ পৃথিবীর কোনো দেশেই এখন পর্যন্ত সতর্কতা জারি করা হয়নি বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী।

এক প্রশ্নের জবাবে সায়েদুর রহমান বলেন, ‘ভাইরাস যখন ছড়ায় তখন এটি মিউটেশন (বিবর্তন) হতে থাকে। বেশি বেশি ছড়ালে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। চেষ্টা করতে হবে সার্কুলেশনটা (ছড়ানো) যাতে কম হয়।’

এ বিষয়ে সরকারের ককটা প্রস্তুতি রয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি শ্বসনতন্ত্রে আক্রমণ করে এবং অক্সিজেনের চাহিদা বাড়াচ্ছে। করোনার সময় আমাদের যে প্রস্তুতি ছিল সেগুলোকে পুনর্বিন্যাস করলেই আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে আমাদের মূল প্রস্তুতি হলো অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা। সেই প্রস্তুতি আমাদের দেশের ৩০টি জেলায় রয়েছে। ৩৪টি জেলায় আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমরা মনে করি না যে এই জিনিসগুলো এই মুহূর্তে প্রয়োজন হবে। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেন আমরা দ্রুত সাড়া দিতে পারি।’

জ্বর, সর্দি-কাশি, গা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া- এগুলো সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো এইচএমপি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ারও লক্ষণ। সাধারণ ফ্লু ও এইচএমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় কোনো পার্থক্য নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মানুষকে কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে বিশেষ সহকারী বলেন, ‘যখন অনেক মানুষের মধ্যে যাবেন, তখন যাতে মাস্ক পরেন। কেউ অসুস্থ বোধ করলে যাতে ঘরে থাকেন। সাধারণ এ বিষয়গুলো মেনে চললে এ ভাইরাসের বিস্তার কমবে বলেও জানান এই চিকিৎসক।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com