এইচএমপিভি ভাইরাস: আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ভারতেও তিন শিশুর শরীরে শনাক্ত 

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।। 

সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল করোনা মহামারি । করোনায় মৃত্যু-আক্রান্ত-আতঙ্ক ছড়িয়েছিল প্রায় সব দেশেই। সেই মহামারি কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়েছে বিশ্ব। এর মধ্যেই আবারও হুমকি হয়ে উঠছে নতুন মহামারি। চীন-জাপানে নতুন আতঙ্ক দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। চীন-জাপান ছাড়িয়ে মালয়েশিয়া-ভারতেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।সামনের দিনগুলোতে আবারও এমন মহামারি বা সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ভাইরোলজিস্টরা।তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটা নতুন কোনো রোগ নয়। এর ভয়াবহতার ঝুঁকিও কম।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এটি পুরোনো রোগ, নতুন কিছু না বলেও জানিয়েছেন তারা।

 এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম বলেন, এ ভাইরাস নিয়ে অতিরিক্ত ভয়ের কিছু নেই। এতে বড় ধরনের হুমকি নেই। এর আগেও দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

তিনি বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ও করোনাভাইরাসের মতোই সিম্পটম (উপসর্গ) দেখা দিতে পারে। তবে এতে বড় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এই রোগের আলাদা ভ্যাকসিন নেই। তবে প্রচলিত চিকিৎসায় এই রোগ ভালো হয়।

আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরীন  বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাস এর আগেও বাংলাদেশে পাওয়া গেছে। এটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসেন  বলেন, ২০১৭ সাল থেকেই আমাদের দেশে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়ে আসছিল। আমরা আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা বলেছে এ বছর এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি।

তিনি বলেন, চীন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গেও আমরা আলাপ করেছি। চীন জানিয়েছে তারা এই রোগের কারণে কোনো জরুরি অবস্থা জারি করেনি। অনেক ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আমরা এ বিষয়ে আলোচনায় বসেছি। আমরা আবারও এই রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসবো।

এদিকে চীন, মালয়েশিয়ার পর এবার ভারতেও শনাক্ত হলো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে দেশটির কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে দুটি শিশুর শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত হয়। এছাড়াও কলকাতায় এক শিশুর শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, সোমবার সকালে বেঙ্গালুরুতে প্রথমে আট মাস বয়সী একটি শিশুর শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। পরে তিন মাসের একটি শিশুর শরীরেও এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়।

জানা গেছে, তিন মাস বয়সী শিশুটিকে এরই মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর আট মাস বয়সী শিশুটি এখনো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

তবে এটি এইচএমপিভির চীনা ভ্যারিয়েন্ট কি না, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাছাড়া ওই দুই শিশুর বেঙ্গালুরু ছাড়া অন্য কোথাও ভ্রমণের ইতিহাসও নেই। এদিকে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, চীনে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে এইচএমপি ভাইরাসের সংক্রমণের কোনো সম্পর্ক নেই।

স্থানীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, এই দুই শিশুর কাউকেই সম্প্রতি অন্যত্র ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়নি বা তাদের ট্রাভেল হিস্ট্রি নেই। ফলে অন্য কোনো দেশ বা অঞ্চলে গিয়ে এইচএমপিভিতে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সম্প্রতি চীনে এই ভাইরাসের একটি ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে উদ্বেগ দানা বেঁধেছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও।

এদিকে, পরপর দুটি সংক্রমণের খবর শুনতেই কর্নাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গুন্ডু রাও সোমবার দুপুরে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। তবে রাজ্যবাসীকে অযথা উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যটির স্বাস্থ্যসচিব হর্ষ গুপ্তা।

স্বাস্থ্যসচিব গুপ্তা জানান, এই ভাইরাস নিয়ে চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই। এইচএমপিভি ভারতেও রয়েছে। তবে এই ভাইরাসটির রূপান্তর হয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তাছাড়া অতীতেও ভারতে সাধারণ এইচএমপি ভাইরাস দেখা গেছে বলেও জানান তিনি।

অবশ্য এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য বলেছে চীনও। তাদের বক্তব্য, এটি মৌসুমী অর্থাৎ শীতকালীন সংক্রমণ মাত্র। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও দেশবাসীকে অযথা উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের আরও কাছে, কলকাতায় হদিশ মিললো এইচএমপিভি ভাইরাসের। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীতে ছয় মাসের এক শিশুর শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে । চিকিৎসার পর শিশুটি আপাতত সুস্থ রয়েছে।

জানা গেছে, আক্রান্ত শিশুটির বাড়ি কলকাতার যাদবপুরে। কর্মসূত্রে তার বাবা-মা দুজনেই মুম্বাইয়ে থাকেন।

গত বছরের নভেম্বর মাস নাগাদ শিশুটি মুম্বাই থেকে কলকাতায় এসেছিল। কলকাতা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পরেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে কলকাতার বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।শিশুটির পরিস্থিতি দেখে চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে ভর্তি করার পর নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয় তাকে। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শিশুটিকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়।

কী হয়েছে জানার জন্য শিশুটির লালারস সংগ্রহ করে পিসিআর চ্যানেলে পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, শিশুটির হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস পজিটিভ। পরবর্তীতে, ভেন্টিলেশন থেকে বের করেও প্রায় দিন দশেক তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

হাসপাতালে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে শিশুটির চিকিৎসা করা হয়। বর্তমানে সে সুস্থ রয়েছে। তাকে মুম্বাইয়ে নিয়ে গেছে বাবা-মা।

শিশুটিকে চিকিৎসা দেওয়া সহেলী দাশগুপ্ত জানান, শিশুটিকে অসুস্থ অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে হাই ফিভার ছিল, সঙ্গে হচ্ছিল কাশি। তারপর শুরু হয় তীব্র শ্বাসকষ্ট। ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছিল। তার লালারস সংগ্রহ করে আমরা টেস্টের জন্য পাঠাই। সেই টেস্টে ধরা পড়ে এইচএমপিভি। এখন সে সুস্থ।

এসএন পোদ্দার নামে আরেক চিকিৎসক জানান, যেহেতু এই মুহূর্তে এই ভাইরাসের কোনো টিকা নেই, তাই প্রতিরোধই একমাত্র পন্থা। হাই ফিভার (উচ্চমাত্রায় জ্বর), শ্বাসকষ্ট, কাশি, গায়ে ছোট ছোট দানা দেখা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রাথমিকভাবে কী করা যাবে সে বিষয়ে এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, সাবান এবং পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধুতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, বাড়ির বাইরে থেকে এসে সবসময় হাত স্যানিটাইজ করা আবশ্যক। সাবান হাতের কাছে না থাকলে অ্যালকোহল-বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যায়। মূলত শিশু এবং প্রবীণ ব্যক্তিরাই এই ভাইরাসের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তবে ভয়ের কিছু নেই। এমন কোন উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়েছে।

 

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com