আসছে সবার জন্য ‘স্বাস্থ্য কার্ড’

এক কার্ডেই রোগীর বিস্তারিত তথ্য পাবেন চিকিৎসকরা

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

বিশ্বের  অন্যান্য দেশের মতো  বাংলাদেশও আসছে সবার জন্য ‘স্বাস্থ্য কার্ড’। এক কার্ডেই রোগীর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন চিকিৎসকরা। যদিও শুরুর দিকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর এবং মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় পাইলট প্রকল্পের আওতায় দেওয়া হবে এই স্বাস্থ্য কার্ড। এরপর দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কার্ড দেওয়া হবে। সরকারি হাসপাতালের পর এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হবে অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোও।                                                               স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে,  প্রেসক্রিপশন আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফাইলের সংরক্ষণের ঝামেলা এড়িয়ে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত সব তথ্য ডিজিটাল ডেটাবেইজে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

রোগীদের প্রত্যেকের জন্য থাকবে  অন্যান্য দেশের মতো ডিজিটাল কার্ড; যাতে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, রোগ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।

বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটার ক্ষেত্রে সেই কার্ড বহন করলেই চলবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর মেডিকেল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (এমআইএস) বাস্তবায়ন করছে এই প্রকল্প।

বিষয়টি নিয়ে এমআইএসের পরিচালক অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন  বলেন, একজন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্ম নিবন্ধন কার্ডের সঙ্গে মিল রেখে স্বাস্থ্য কার্ড করা হবে। প্রতিটি স্বাস্থ্য কার্ডের ওপর ভিত্তি করে ওই ব্যক্তির হেলথ প্রোফাইল তৈরি হবে, যাতে ওই ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।

 তিনি বলেন,  আমরা চাইছি সবার যেন একটা ইউনিক হেলথ আইডি হয়। একজন রোগী যখন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যাবে, তখন এই কার্ড দেখে চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিতে পারবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র, পুরনো প্রেসক্রিপশন বহন করতে হবে না। সব তথ্যই সেখানে সংরক্ষিত থাকবে।”

এই প্রকল্প বাস্তবায়নে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের জন্য নির্বাচন কমিশন এবং জন্ম নিবন্ধনের জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি হয়েছে বলে জানান শাহাদাত হোসেন।

তিনি আরও জানান,  এটুইআইয়ের মাধ্যমে তারা আমাদের এসব তথ্য দিচ্ছেন। অফিসিয়াল কাজকর্ম মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। আমরা দেখতে চাচ্ছি, আমাদের সিস্টেমগুলো সব কাজ করছে কি না, সেটা দেখার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এটা করা হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্পের পাইলটিং করব।

কার্ড চালু হলে রোগীকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়াটা সহজ হবে বলে মনে করছেন শাহাদাত।

 স্বাস্থ্য অধিদফতর মনে করছে,  সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান এবং তথ্য সংরক্ষণের জন্য তৈরি হচ্ছে এই ‘শেয়ারড হেলথ রেকর্ডস প্ল্যাটফর্ম। এ কার্ড সুনির্দিষ্টভাবে রোগ নির্ণয় করা, চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি, নাগরিকদের অর্থ ও সময় সাশ্রয়, সুশৃঙ্খল চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে  ।

 ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সরকারি-বেসরকারি সব রোগ নির্ণয় কেন্দ্র এবং গবেষণাগারের সঙ্গে স্বাস্থ্য কার্ডধারীর তথ্য সমন্বয় করা হবে। সেখানে নমুনা পরীক্ষার পর রোগ নির্ণয় সংক্রান্ত তথ্যগুলো সংরক্ষিত থাকবে।

তিনি বলেন, তাতে করে যে কোনো সময় রোগীর এসব তথ্য দেখা যাবে। কোনো ফাইল মেনটেইন করতে হবে না, ইমেজিংও সংরক্ষিত থাকবে। কোনো রোগী হাসপাতালে গিয়ে এই কার্ড দেখালেই প্রাথমিকভাবে এই রোগীর রোগ সংক্রান্ত তথ্য পেয়ে যাবে।

এমআইএসের পরিচালক জানান,  এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর প্রোগ্রামের আওতায়। পুরো প্রকল্প পঞ্চম সেক্টর প্রোগ্রামের আওতায় বাস্তবায়ন হবে বলে জানান শাহাদাত।

পাইলট প্রকল্পের আওতায় শুরুতে স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হবে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. তাসনুভা মারিয়া জানান, স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

তিনি বলেন,  আমরা সবকিছুর সেটআপ করছি। লজিস্টিকস সাপোর্ট, ম্যানপাওয়ার, কার্ড দেওয়ার জন্য ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমরা এই পর্যায়ে আছি।

এই প্রকল্পকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি উদ্যোগ হিসেবে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব।

 তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কার্ড করতে পারলে তা হবে খুবই ভালো কাজ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার এই স্বপ্নটা ভালো। পাইলট প্রকল্প হিসেবে করলে ভিন্ন বিষয়।

 তিনি আরও বলেন, সারা দেশে করতে হলে এর জন্য বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করতে হবে। এজন্য অতিরিক্ত লোক লাগবে, যারা তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ, চিকিৎসা সেবায় জড়িতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যে রেফারেল করবে সেজন্য বড় হাসপাতালগুলো প্রস্তুত কি না সেই বিষয়গুলোও মাথায় রাখতে হবে।

যেভাবে মিলবে স্বাস্থ্য কার্ড :

স্বাস্থ্য অধিদফতর  জানিয়েছে, স্বাস্থ্য কার্ডের জন্য একটি বিশেষ ওয়েবসাইট চালু করা হবে। সেই ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করলেই স্বাস্থ্য কার্ড পাওয়া যাবে।

যারা অনলাইনে নিজে নিবন্ধন করতে পারবেন না, তারা অনুমোদিত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নিবন্ধন করাতে পারবেন। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য জন্ম নিবন্ধনের অনুলিপি নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। হাসপাতালে স্বাস্থ্য কার্ড তৈরি করে দেওয়ার জন্য নির্ধারিত কাউন্টার থাকবে। সেখান থেকে এই কার্ড বিনামূল্যে করে দেওয়া হবে।

যেসব হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে অটোমেশনের আওতায় এসেছে, তারা ‘শেয়ারড হেলথ রেকর্ডস’ এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে যুক্ত হবে। প্রতিটি নাগরিকের একটি নিজস্ব হেলথ আইডি নম্বর থাকবে। স্বাস্থ্য কার্ডের আওতায় আসা একজন রোগীর ‘জন্ম থেকে মৃত্যু’ পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবার সব তথ্য ডিজিটাল ডাটাবেইজে সংরক্ষণ করা থাকবে।

আগের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব কাগজও এতে থাকবে। অনলাইনেই সব তথ্য থাকায় হেলথ কার্ডের নম্বর দিলেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট চলে যাবে রোগীরে ইমেইলে। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই রোগীরা হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন।

যেসব বেসরকারি হাসপাতাল নিজস্ব অটোমেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, তারা তাদের সফটওয়্যারকে শেয়ারড হেলথ রেকর্ডসের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবেন। যেসব বেসরকারি হাসপাতালের নিজস্ব সফটওয়্যার নেই এবং নতুন কোনো সফটওয়্যার তৈরি করতে চাচ্ছে না তাদের সংযুক্ত করতে একটি সফটওয়্যার স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে শিগগিরই দেওয়া হবে।

বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় আইডি ও পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করবে। তারপর ওই সফটওয়্যার তাদের সার্ভারে স্থাপনের পর ব্যবহার করতে পারবেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ ।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com