নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে সরকার ৩০ লাখ করে টাকা সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬ টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
মাহফুজ আলম বলেন, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে এ টাকা প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে যদি আরো প্রয়োজন হয় যাচাই-বাছাই করে সেটাও প্রদান করা হবে। যারা শহীদ হয়েছেন শুধু তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে বিষয়টি এমন নয়, যারা আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকেও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সময় হতাহতদের তালিকা সরিয়ে ফেলায় শহীদদের তালিকা করতে সরকারকে বেগ পেতে হচ্ছে।
এর আগে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের পরিবারকে সহায়তার জন্য জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়। সাত সদস্য বিশিষ্ট এ ফাউন্ডেশনের প্রধান হলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এই ফাউন্ডেশনকে সরকারের ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা অনুদান দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও প্রতিটি শহীদ পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরিতে সরকারকে ভুগতে হচ্ছে জানিয়ে পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আন্দোলনের শহীদদের একটি ভেরিফায়েড তালিকা হয়েছে। সে সময় (আন্দোলন চলাকালে) হাসপাতালগুলোয় কাগজপত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। অনেক কাগজপত্র সরিয়ে ফেলার কারণে অনেক জায়গা থেকে তথ্য পেলেও হাসপাতালগুলোর সঙ্গে ক্রসচেক করতে পারছি না। আমাদের কাছে ভেরিফায়েড লিস্ট বাদেও আরেকটা তালিকা আছে, সেটা মাঠপর্যায় থেকে যাচাই-বাছাই করে আনতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেসব হাসপাতাল থেকে কাগজপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, নির্দেশদাতা ও যারা সরিয়ে ফেলেছেন, তাদের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। দোষীদের শাস্তির মুখোমুখি করবো।’
আহত ও নিহত পরিবারের সঙ্গে ছাত্র প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বলেও তিনি জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আহতদের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা শুনতে পেয়েছি দু-একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অর্থ নেওয়া হয়েছে। এগুলো ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ ফেরত না দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আহতদের দেশে-বিদেশে সব ধরনের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিদেশে পাঠানোর জন্য সাত জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আরও কারও বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজন হলে সেটাও করা হবে।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশে নিহত এক হাজার ৫৮১ জনের তালিকা তৈরি করেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি।
অন্যদিকে,ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৭৩৭ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হতে পেরেছে সরকার। এ ছাড়া এই সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আন্দোলনে আহত হয়েছেন ২২ হাজার ৯০৭ জন। আহতদের মধ্যে চোখ হারিয়েছেন ৪০০ জন। এর মধ্যে দুটি চোখই হারিয়েছেন ৩৫ জন! গত ৭ অক্টোবর বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।