১৩
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
জুলাই -আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুরুতর আহত হয়েছেন ভ্যান চালক মোশাররফ হোসেন। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। গুলিবিদ্ধ হয়ে এরই মধ্যে তার বাম হাত পুরোপুরি অচল হয়ে। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের ভেতরে এখনো অংসখ্য রয়ে গেছে। প্রায় তিন মাস ধরে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি সময়ের আলোকে আলোকে বলেন, ৫ আগস্ট যাত্রবাড়ি এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর তিনটি হাসপাতাল ঘুরেছি। কোথাও ঠিকমত চিকিৎসা পাইনি। আর আমি সামান্য ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতাম। কিন্তু হাসপাতালে থেকে হাসপাতালে ঘুরে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। করেছি। আত্মীয় স্বজনদের কাছে-দেনা করেছি। এমনকি ভ্যানসহ ঘরের ফার্নিচারও বিক্রি করে দিয়েছি। এখন সরকার খরচ চালালেও আয়-রোজগার সব বন্ধ। বাচ্চাদের পড়াশোনা প্রায় বন্ধের পথে। একদিকে শরীরের ভেতরে থাকা গুলির যন্ত্রণা অন্যদিকে সংসারের খরচ চালানোর চিন্তায় রাতে ঘুম আসেনা। চারদিকে শুধুই অন্ধকার দেখি। আর স্বামীর অচল হয়ে যাওয়া, চিকিৎসার খরচ যোগানো এবং তিন সন্তান নিয়ে ভবিষ্যতের দু:চিন্তার কথা তুলে ধরে তার স্ত্রী মাহমুদা আকতার সময়ের আলোকে বলেন, আমার স্বামী কবে সুস্থ হবে জানিনা। আর সুস্থ হলেও তো কোন কাজ করতে পারবে না। তিন সন্তানকে নিয়ে আমি কি করবো কিছুই মাথায় আসছে না। দিন-রাত শুধু এনসব কথা ভেবে এক ধরনের মাসসিক যন্ত্রণায় ভুগছি। শুধু এই পরিবার নয় তাদের মতো আন্দোলনে আহত রোগী কিংবা তাদের পুরো পরিবারই এক ধরেনের মানসিক যন্ত্রণার ও মানসিক ভুগছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আন্দোলনে আহতদের নিয়ে এক সার্ভেতে দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন ৫৩ শতাংশ সমস্যায়। এনজায়েটি বা উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছেন ৪২ শতাংশ এবং ডিপ্রেশন বা তীব্র মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন ১১ শতাংশ। হাইপারঅ্যারাউজাল ডিপ্রেশন বা আঘাতমূলক আক্রান্ত ব্যক্তিরা সহজেই চমকে ওঠার সমস্যা এবং সাধারণ মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন আট শতাংশ রোগী। আহতদের মধ্যে ৩০ শতাংশই ছিল ছাত্র এবং সবচেয়ে বেশি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন যাত্রাবাড়ি এলাকায় থেকে। এছাড়াও ভর্তি হওয়া রোগী আহত রোগীদের মধ্যে কারও কারও ঘুমের ও উদ্বেগজনিত দুটো সমস্যায় ছিলো। আবারও ডায়াগনোসিস সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন রোগীরা।
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হওয়া রোগীদের উপর এই সার্ভে করা হয়। এই সার্ভের নেতৃত্বে দেন বিএসএমএমউর মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল আহসান।
‘মেন্টাল হেলথ ইমপ্যাক্ট অ্যামাং দ্য রেসপন্ডেন্টস অব জুলাই ম্যাসাকার’ শীর্ষক নামে এই সার্ভে কার হয়।
জুলাই-আগস্টে দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে হতাহত হয়েছে অনেকে। সরকারের সবশেষে হিসেবে বলা হয়, আন্দোলনে ৭৩৭ জন জীবন দিয়েছেন ২৩ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। তবে এটা ভেরিফায়েড না। আন্দোলনের মধ্যে হতাহতের ঘটনা, সংঘর্ষ, রক্তপাত প্রত্যক্ষ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হচ্ছে অনেককেই।আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী থেকে শুরু সব শ্রেণী-পেশার মানুষ রয়েছে। অনেকেই চিরতরে পঙ্গু, দুই চোখ কিংবা এক চোখ হারিয়ে অথবা মাথাসহ শরীরের অংশে গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনো হাসপাতালে বিছানায় তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছেন। তাদের অনেকেরই এখনও ক্ষত শুকায়নি। আবার অনেকেইে ক্লাসে কিংবা কর্মক্ষেত্রে ফিরেছেন। এছাড়াও চিকিৎসার অভাবে এবং আর্থিক সংকটে চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সহিংসতার শিকার কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী উভয়েরই নানা ধরনের মানসিক সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি আছে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সেবায় নিয়োজিতদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ কাজের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে।
চিকিৎসকরা জানান, মানসিক রোগগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ঘুমের সমস্যা, উদ্বেগ, আতঙ্ক, ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ, শাররিক ও মানসিক অস্থিরতা, আত্মবিশ^াসের অভাব, নির্দিষ্ট জিনিসে ভয় বা ফোবিয়া, হিস্টিরিয়া, সামাজিক ভয়, এবং সূচিবায়ু ইত্যাদি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে বর্তমানে ৩ কোটিরও বেশি মানুষমানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।
মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাব নিয়ে এই জরিপে বলা হয়, আন্দোলনে আহত হয়ে বিএসএমএমইউতে মোট ৩২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৩১ জনের উপর এই সার্ভে করা হয়। তার মধ্যে ২৫ জন ছিল পুরুষ। বাকীরা মহিলা ও শিশু। আর ডাটা তৈরি করা হয়েছে ২৭ জনের। ভর্তি হওয়া আহতদের মধ্যে ৫ জন ছিল অন্ধ। একজন রোগীর ৭ বার সবচেয়ে বেশি অপারেশন করা হয়েছে। আর একাধিক সার্জারি হয়েছে ৭ জনের। তিনবার সার্জারি ৩ জনের, চারবার সার্জারি ২ জনের হয়েছে।
আর দুই পদ্ধতিতে এই সার্ভে করা হয়। এর মধ্যে একটি হলো পিটিএসডি(পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার) যা তীব্র আঘাতপ্রাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, অন্যটি পেশেন্ট হেলথ কোয়েশ্চেনেয়ার (পি এইচ কিউ – ৯) বা রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য ও বিষন্নতার মাত্রা নির্ণয় করা।
সার্ভের ফলাফলে বলা হয়, মোট ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ১৪ জনের ঘুমের সমস্যা অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ এবং ১১ জনের বা ৪২ শতাংশ উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। আহত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীরা অন্য হাসপাতালে বিএসএমএমউতে রের্ফাড হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। আহতরা শুরুতেই ভর্তি হননি। তার মধ্যে ৩০ শতাংশই ছিল ছাত্র। তারপরেই ড্রাইভার এবং বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবি মানুষ। আহতদের গানশর্ট ইনজুরি বা বন্দুকের গুলির আঘাত ছিল ২৭ শতাংশের।গবেষণার বিষয়ে বিএসএমএমউর চিকিৎসক মোহাম্মদ শামসুল আহসান বলেন, আমাদের ধারণা ছিল আহত রোগীরা হয়তো তীব্র সমস্যায় ভুগছেন কিন্তু তা হয়নি। তবে আহতদের মধ্যে ভবিষ্যত নিয়ে চরম উদ্বিগতা দেখা গেছে। বিশেষ করে কতটা সুস্থ হবে এবং তাদেরকে কে দেখবে, পরিবার ও সংসার কে দেখবে বা কিভাবে চালবে হবে এই নিয়ে দু:চিন্তা বেশি রয়েছে।
তিনি বলেন, আন্দোলনে যারা মাঠে ছিল এবং নিহত বা আহত হয়েছে। সেই রোগীরা বা তাদের পরিবার-পরিবার নি:সন্দেহে এক ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। আর যারা যেসব শিশু থেকে শুরু বিভিন্ন বয়সের মানুষ আহত হয়েছেন কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বা জেল খেটেছেন। যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্যাতন, হত্যা, গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলো সরাসরি টিভিতে দেখেছেন তাদের বেশির ভাগই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখতে হবে। আর যারা আন্দোলনে আহত হয়েছেন রাষ্ট্রের উচিত তাদের দ্বায়িত্ব নেওয়া। এখন কিভাবে দ্বায়িত্ব নিবে সেই কর্মপন্থা বের করতে হবে।
দেশের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে বিএসএমএমউর মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. মহসিন আলী শাহ বলেন, আমাদের দেশে ১৮ শতাংশের বেশি রোগী রয়েছে। তবে অনেকেই মনে করেন মানসিক রোগ মানে পাগল কিন্তু বিষয়টি তা নয়। অনেক কারণে মানসিক সমস্যা হতে পারে। যেমন তীব্র মানসিক আঘাত পেলে পিটিএসডির ¯ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর কিছু লক্ষণ হচ্ছে, যে ঘটনা বা অভিজ্ঞতা ব্যক্তির মনে আঘাত সৃষ্টি করেছে, তা বারবার ফিরে আসে। ঘটে যাওয়া ট্রমাটিক ঘটনা কখনও বাস্তব স্মৃতি হয়ে, কখনও কল্পনা বা দুঃস্বপ্নের মধ্যে চলে আসে। ব্যক্তি সেই স্মৃতিতে আতঙ্কিত বোধ করে, মনে করে তার জীবনে আবারও সেই ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। এ ছাড়া আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে যেমন- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ঘুম কম হওয়া, ভয়, আতঙ্ক, রাগ বা অস্থিরতা প্রকাশ করা।
মানসিক সমস্যা থেকে সমাধানের পরামর্শ দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, আমাদের দেশে দিন দিন মানসিক সমস্যার রোগী বাড়ছে। তবে আগে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এখন এর গুরুত্ব বাড়ছে। যদিও এখনো অনেকেই এই সমস্যাটাকে তেমন গুরুত্ব দেন না। আবার অনেকে বুঝতেই পারেন না তার মানসিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। শারীরিক অন্যান্য সমস্যার মতো মানসিক সমস্যায়ও আক্রান্ত হলে প্রথমদিকে এলে হয়তো ওষুধ ছাড়াই শুধু কাউন্সেলিং দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু যত দেরি হবে, চিকিৎসা তত দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যায়।
আন্দোলনে আহতদের নিয়ে এক সার্ভেতে দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন ৫৩ শতাংশ সমস্যায়। এনজায়েটি বা উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছেন ৪২ শতাংশ এবং ডিপ্রেশন বা তীব্র মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন ১১ শতাংশ। হাইপারঅ্যারাউজাল ডিপ্রেশন বা আঘাতমূলক আক্রান্ত ব্যক্তিরা সহজেই চমকে ওঠার সমস্যা এবং সাধারণ মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন আট শতাংশ রোগী। আহতদের মধ্যে ৩০ শতাংশই ছিল ছাত্র এবং সবচেয়ে বেশি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন যাত্রাবাড়ি এলাকায় থেকে। এছাড়াও ভর্তি হওয়া রোগী আহত রোগীদের মধ্যে কারও কারও ঘুমের ও উদ্বেগজনিত দুটো সমস্যায় ছিলো। আবারও ডায়াগনোসিস সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন রোগীরা।
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হওয়া রোগীদের উপর এই সার্ভে করা হয়। এই সার্ভের নেতৃত্বে দেন বিএসএমএমউর মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল আহসান।
‘মেন্টাল হেলথ ইমপ্যাক্ট অ্যামাং দ্য রেসপন্ডেন্টস অব জুলাই ম্যাসাকার’ শীর্ষক নামে এই সার্ভে কার হয়।
জুলাই-আগস্টে দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে হতাহত হয়েছে অনেকে। সরকারের সবশেষে হিসেবে বলা হয়, আন্দোলনে ৭৩৭ জন জীবন দিয়েছেন ২৩ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। তবে এটা ভেরিফায়েড না। আন্দোলনের মধ্যে হতাহতের ঘটনা, সংঘর্ষ, রক্তপাত প্রত্যক্ষ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হচ্ছে অনেককেই।আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী থেকে শুরু সব শ্রেণী-পেশার মানুষ রয়েছে। অনেকেই চিরতরে পঙ্গু, দুই চোখ কিংবা এক চোখ হারিয়ে অথবা মাথাসহ শরীরের অংশে গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনো হাসপাতালে বিছানায় তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছেন। তাদের অনেকেরই এখনও ক্ষত শুকায়নি। আবার অনেকেইে ক্লাসে কিংবা কর্মক্ষেত্রে ফিরেছেন। এছাড়াও চিকিৎসার অভাবে এবং আর্থিক সংকটে চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সহিংসতার শিকার কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী উভয়েরই নানা ধরনের মানসিক সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি আছে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সেবায় নিয়োজিতদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ কাজের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে।
চিকিৎসকরা জানান, মানসিক রোগগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ঘুমের সমস্যা, উদ্বেগ, আতঙ্ক, ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ, শাররিক ও মানসিক অস্থিরতা, আত্মবিশ^াসের অভাব, নির্দিষ্ট জিনিসে ভয় বা ফোবিয়া, হিস্টিরিয়া, সামাজিক ভয়, এবং সূচিবায়ু ইত্যাদি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে বর্তমানে ৩ কোটিরও বেশি মানুষমানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।
মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাব নিয়ে এই জরিপে বলা হয়, আন্দোলনে আহত হয়ে বিএসএমএমইউতে মোট ৩২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৩১ জনের উপর এই সার্ভে করা হয়। তার মধ্যে ২৫ জন ছিল পুরুষ। বাকীরা মহিলা ও শিশু। আর ডাটা তৈরি করা হয়েছে ২৭ জনের। ভর্তি হওয়া আহতদের মধ্যে ৫ জন ছিল অন্ধ। একজন রোগীর ৭ বার সবচেয়ে বেশি অপারেশন করা হয়েছে। আর একাধিক সার্জারি হয়েছে ৭ জনের। তিনবার সার্জারি ৩ জনের, চারবার সার্জারি ২ জনের হয়েছে।
আর দুই পদ্ধতিতে এই সার্ভে করা হয়। এর মধ্যে একটি হলো পিটিএসডি(পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার) যা তীব্র আঘাতপ্রাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, অন্যটি পেশেন্ট হেলথ কোয়েশ্চেনেয়ার (পি এইচ কিউ – ৯) বা রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য ও বিষন্নতার মাত্রা নির্ণয় করা।
সার্ভের ফলাফলে বলা হয়, মোট ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ১৪ জনের ঘুমের সমস্যা অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ এবং ১১ জনের বা ৪২ শতাংশ উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। আহত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীরা অন্য হাসপাতালে বিএসএমএমউতে রের্ফাড হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। আহতরা শুরুতেই ভর্তি হননি। তার মধ্যে ৩০ শতাংশই ছিল ছাত্র। তারপরেই ড্রাইভার এবং বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবি মানুষ। আহতদের গানশর্ট ইনজুরি বা বন্দুকের গুলির আঘাত ছিল ২৭ শতাংশের।গবেষণার বিষয়ে বিএসএমএমউর চিকিৎসক মোহাম্মদ শামসুল আহসান বলেন, আমাদের ধারণা ছিল আহত রোগীরা হয়তো তীব্র সমস্যায় ভুগছেন কিন্তু তা হয়নি। তবে আহতদের মধ্যে ভবিষ্যত নিয়ে চরম উদ্বিগতা দেখা গেছে। বিশেষ করে কতটা সুস্থ হবে এবং তাদেরকে কে দেখবে, পরিবার ও সংসার কে দেখবে বা কিভাবে চালবে হবে এই নিয়ে দু:চিন্তা বেশি রয়েছে।
তিনি বলেন, আন্দোলনে যারা মাঠে ছিল এবং নিহত বা আহত হয়েছে। সেই রোগীরা বা তাদের পরিবার-পরিবার নি:সন্দেহে এক ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। আর যারা যেসব শিশু থেকে শুরু বিভিন্ন বয়সের মানুষ আহত হয়েছেন কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বা জেল খেটেছেন। যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্যাতন, হত্যা, গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলো সরাসরি টিভিতে দেখেছেন তাদের বেশির ভাগই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখতে হবে। আর যারা আন্দোলনে আহত হয়েছেন রাষ্ট্রের উচিত তাদের দ্বায়িত্ব নেওয়া। এখন কিভাবে দ্বায়িত্ব নিবে সেই কর্মপন্থা বের করতে হবে।
দেশের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে বিএসএমএমউর মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. মহসিন আলী শাহ বলেন, আমাদের দেশে ১৮ শতাংশের বেশি রোগী রয়েছে। তবে অনেকেই মনে করেন মানসিক রোগ মানে পাগল কিন্তু বিষয়টি তা নয়। অনেক কারণে মানসিক সমস্যা হতে পারে। যেমন তীব্র মানসিক আঘাত পেলে পিটিএসডির ¯ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর কিছু লক্ষণ হচ্ছে, যে ঘটনা বা অভিজ্ঞতা ব্যক্তির মনে আঘাত সৃষ্টি করেছে, তা বারবার ফিরে আসে। ঘটে যাওয়া ট্রমাটিক ঘটনা কখনও বাস্তব স্মৃতি হয়ে, কখনও কল্পনা বা দুঃস্বপ্নের মধ্যে চলে আসে। ব্যক্তি সেই স্মৃতিতে আতঙ্কিত বোধ করে, মনে করে তার জীবনে আবারও সেই ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। এ ছাড়া আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে যেমন- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ঘুম কম হওয়া, ভয়, আতঙ্ক, রাগ বা অস্থিরতা প্রকাশ করা।
মানসিক সমস্যা থেকে সমাধানের পরামর্শ দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, আমাদের দেশে দিন দিন মানসিক সমস্যার রোগী বাড়ছে। তবে আগে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এখন এর গুরুত্ব বাড়ছে। যদিও এখনো অনেকেই এই সমস্যাটাকে তেমন গুরুত্ব দেন না। আবার অনেকে বুঝতেই পারেন না তার মানসিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। শারীরিক অন্যান্য সমস্যার মতো মানসিক সমস্যায়ও আক্রান্ত হলে প্রথমদিকে এলে হয়তো ওষুধ ছাড়াই শুধু কাউন্সেলিং দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু যত দেরি হবে, চিকিৎসা তত দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যায়।