নিজস্ব প্রতিবেদক।।
সকল শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আগামী শনিবার (১৫ মার্চ) সারাদেশে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। সেদিন সারাদেশে এক যোগে ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী প্রায় ২ কোটি ২৬ লাখ শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এর মধ্যে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী সব শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (১ লাখ আইইউ) এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী সব শিশুকে একটি লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (২ লাখ আইইউ) বিনামূল্যে খাওয়ানো হবে। মোট ১ লাখ ২০ হাজার স্থায়ী ইপিআই কেন্দ্রে তাদের এই ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশে অপুষ্টির হার কমেছে এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। শুধু দেশেই নয়, বিশ্ব নেতৃত্বের পুষ্টি ফোরাম স্ক্যালিং আপ নিউট্রিশন (এসইউএন) এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে আসছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী সময়ে অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুদের মাঝে রাতকানা রোগের হার ৪.১০ শতাংশ ছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৯৭৪ সালে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম গ্রহণ করে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো শুরু হয়। পরবর্তীতে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো অব্যাহত রাখার ফলে বর্তমানে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত রাতকানা রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। ভিটামিন ‘এ’ শুধুমাত্র অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে না। এর পাশাপাশি ৫ বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যুর হারও প্রায় এক চতুর্থাংশ কমিয়ে আনে, যা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৪ (শিশু মৃত্যুর হার কমানো) অর্জনে খুবই সহায়ক ছিল। আমাদের সকল শিশু সঠিকভাবে মায়ের দুধ কিংবা সঠিক মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে পারে না। ফলে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সের শিশুদের বিরাট অংশ ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতিতে ভুগছে এবং ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বার্তায় বলা হয়, স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে এই ঘাটতি পূরণে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো প্রয়োজন। ইতোমধ্যে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বছরে দুই বার শতকরা ৯৮ ভাগ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানোর ফলে ভিটামিন ‘এ’ অভাবজনিত অন্ধত্বের হার শতকরা ১ ভাগের নিচে কমে এসেছে এবং শিশু মৃত্যুর হারও কমেছে। এই সাফল্য ধরে রাখতে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে ৬-৫৯ মাস বয়সী সকল শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো চলমান রাখতে হবে।
মন্ত্রালয় জানায়, শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। কিন্তু তাদের একটি অংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। অন্ধত্ব একটি পরিবারের জন্য অভিশাপ তথা একটি দেশের জন্য বোঝা। বছরে ২ বার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের এ অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে বহুলাংশে মুক্ত করা যায় এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকিও কমানো সম্ভব। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুদৃঢ় নেতৃত্বে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশের সকল শিশুর অপুষ্টি দূরীকরণ ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে বদ্ধপরিকর।
মন্ত্রণালয়ের বার্তায় আরও বলা হয়, একটি শিশুও যেন বাদ না পড়ে; উদ্দিষ্ট সকল শিশুকেই যেন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। যাদের ঘরে ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু আছে সেই সকল মা-বাবা এবং অভিভাবকগণ যেন অবশ্যই তাদের শিশুদের নিকটস্থ কেন্দ্রে (ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র) নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ান।
এদিকে, ঢাকা জেলায় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল পাবে ৫ লাখ ৩৭ হাজার শিশু। শনিবার ঢাকার বিভিন্ন উপজেলার ৫ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০১ জন শিশুকে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে এ কার্যক্রম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। এ সময় ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. সরকার ফারহানা কবীর, মেডিকেল অফিসার ডা. মোহা. হাসান আলী ,ডা. নূরেন মুবাশ্শিরা প্রভা , ডিস্ট্রিক্ট সার্ভিল্যান্স মেডিকেল অফিসার ডা. সায়মা আলমগীর এবং জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা শাহানা পারভীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সিভিল সার্জন জানান, শনিবারের ক্যাম্পেইনে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের নীল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এ বছর নীল রঙের ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে ৭৫ হাজার ৫৭২ জন শিশুকে। আর এবং লাল রঙের ক্যাপসুল খাবে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৯২৯ জন শিশু।
জেলায় ১ হাজার ৭৪৩টি ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) কেন্দ্রের পাশাপাশি অস্থায়ী ১ হাজার ৭৪৩টি কেন্দ্রে ৩ হাজার ৪৮৬ জন সেচ্ছাসেবক ও ২৯ জন কর্মকর্তা এই কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ঢাকা জেলার ধামরাই, সাভার, কেরাণীগঞ্জ, নওয়াবগঞ্জ, দোহার এই পাঁচটি উপজেলাসহ সভার পৌরসভা এলাকায় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর ক্যাম্পেইন চলবে।
অন্যদিকে, আগামী ১৫ মার্চ (শনিবার) জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে ৬ লাখ ৯ হাজার ৫২৮ শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে ডিএনসিসির নগর ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।
আয়োজকরা জানায়, ডিএনসিসি এলাকায় ৬ মাস থেকে ১১ মাস বয়সের শিশুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৪৫৪ জন এবং ১২ থেকে ৫৯ বয়সের শিশুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার ৭৪ জন শিশু।