নিজস্ব প্রতিবেদক।।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির জানিয়েছেন, অনুমতি পেলে আগামী তিন মাসের মধ্যে ডেঙ্গুর টিকা আসতে পারে। বিভিন্ন বেসরকারি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি ডেঙ্গুর টিকার সিড এনেছে। মার্চে ল্যাব রেগুলারিটি পারমিশন পেলেই তিন মাসের মধ্যে আসতে পারে ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর গুলশানস্থ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ভবনে ‘ডেঙ্গু মোকাবিলায় বছরব্যাপী আমাদের প্রস্তুতি এবং করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আগামী মার্চ নাগাদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতি পেলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের সিঙ্গেল ডোজ দেশে বানানো সম্ভব হবে। এর দামও হবে অনেক কম। যত বেশি নগরায়ন বাড়বে ডেঙ্গুও তত বাড়বে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে অন্যতম প্রধান বাধা। কেবল উত্তর সিটি করপোরেশন নয়, উত্তর- দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের ভুল ধরে সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।
ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বছরজুড়ে কাজ করছেন বা করার উদ্যোগ দিয়েছেন, এটাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আপনার সমালোচনা করছি, কিছু মনে করবেন না। আপনি বারবার বলছেন, সমন্বয় করার কথা। কিন্তু আপনাদেরই সমন্বয়ের অভাব থেকে গেছে। মশা বা ডেঙ্গু সমস্যা শুধু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নয়। আপনারা নিজেরাই সমন্বয় করতে পারেননি, এখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউকে আনা উচিত ছিল। কারণ, আপনারা সব মশা মেরে শেষ করবেন অথবা তাড়িয়ে দেবেন, সেই মশাগুলো তো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় চলে যাবে। মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকেও সঙ্গে নিয়ে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করা উচিত ছিল।
তিনি বলেন, আপনারা যদি নিজেরাই সমন্বয় করতে না পারেন, তাহলে এর কোনো ভালো ফলাফল হবে না। আপনাদের নিজেদের একসঙ্গে সমন্বয় করে মশা নিধনে কাজ করে যেতে হবে। আজকের এই এত বড় বৈঠকের আয়োজন করেছেন, অথচ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোনো প্রতিনিধি এখানে নেই। এ ছাড়াও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, রাজউক, গণপূর্ত সবার আলাদা আলাদা ক্ষেত্র রয়েছে। তাই সবাইকে নিয়েই সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলেন, মেয়র আপনাকে ধন্যবাদ জানাই, আপনি অবশ্যই কাজ করে যাচ্ছেন, চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু সমন্বয় না হলে মানুষ ভুল বুঝবে, মনে করবে আপনারা কোনো কাজ করছেন না। কিন্তু আপনারা তো কাজ করছেন, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ডেঙ্গু এখন সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে, সমন্বয় করে কাজ করা ছাড়া, আপনি তো একা পারবেন না।
তিনি বলেন, গত বছর ডেঙ্গু হয়ে মারা গেছে ১৭০০-এর মতো মানুষ। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় হয়তো মারা গেছে ৮-৯ হাজার মানুষ। সেটা নিয়ে কিন্তু অত বেশি আলোচনা নেই, ডেঙ্গু নিয়ে এত বেশি আলোচনার কারণ হলো মানুষ ভাবছে একটা ছোট্ট মশার কাছে আমরা হার মানব? এটা মানুষ মানতে চায় না।
বৈঠকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ৬ চ্যালেঞ্জের কথা জানায় ডিএনসিসি। চ্যালেঞ্জগুলো হলো- অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততার ঘাটতি, নির্মাণাধীন ভবনে কর্মরত শ্রমিক এবং কর্মচারীদের জ্ঞানের অভাব এবং অসহযোগিতা, পরিত্যক্ত এবং অপরিকল্পিত ছাদবাগান ৫. বেসমেন্ট পার্কিং এ জমাকৃত পানি এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সংখ্যার তথ্যে অপ্রতুলতা।
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, কোনো ঠিকাদার কোম্পানির কাছ থেকে মশক নিধনের ওষুধ আর আনা হবে না। এর আগে বিটিআই আমরা এনেছিলাম ৫ টন, যার বাজারমূল্য ছিল ৭০ লাখ টাকা। সেখানে সব টেস্টে বিটিআইয়ের কোনো সমস্যা ছিল না। এর মান কোনোদিক দিয়ে কম ছিল না। ঠিকাদার কোম্পানি বিটিআইর কান্ট্রি অব অরজিন মিস ডিক্লারেশন করেছিল। মিস ডিক্লারেশন করে যে কোম্পানি বিটিআই এনেছে সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি। সেই কোম্পানির প্রোডাক্টটি আমরা বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেছি। ৭০ লাখ টাকার একটি টাকাও সেই কোম্পানিকে দেওয়া হয়নি। তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সেই কোম্পানিকে ব্ল্যাকলিস্টেড করা হয়েছে। এই কোম্পানির বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা দরকার ছিল সবই নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন থেকে বিটিআই যারা উৎপাদন করে তাদের কাছ থেকে সরাসরি উৎপাদন করে তাদের থেকেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আনবে। বিটিআই কোনো ঠিকাদারের মাধ্যমে আমরা আনব না। আগের বিটিআই ব্যবহার করা হবে না। কোর্টের সিদ্ধান্তই ব্যবস্থা নেওয়া হবে আগের বিটিআইয়ের বিষয়। বিটিআই ক্রয় করতে গিয়ে আমাদের শিক্ষা হয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের ইমেজের ক্ষতি হয়েছে কিন্তু টাকার কোনো ক্ষতি হয়নি।
মশক নিধন কার্যক্রম মনিটরিং ঠিকভাবে না করতে পারার কথা স্বীকার করে মেয়র বলেন, মশার ওষুধ স্প্রে করার পরে ওই জায়গাগুলোতে ফলাফল কী হচ্ছে, তা নিয়ে আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আমরা আরো উদ্যোগ নেব।
ডেঙ্গু মোকাবিলা ও কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুতি এবং পরামর্শ নিতে আলোচনায় আরও অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. কবিরুল বাসার, নিপসম কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. গোলাম সারোয়ার, স্বাস্থ্য অধিদফরের পরিচালক (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফরের আইইডিসিআর বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন, মো. মইনুল আহসান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।