নিউজ ডেস্ক।।
সারা বিশ্বজুড়ে মোটা হওয়া বা স্থূলতা মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে। আর এজন্যই আগামী ২৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক স্থূলতায় ভুগতে পারেন। একই সাথে এক-তৃতীয়াংশ শিশু ও তরুণ-তরুণীও এই সমস্যায় পড়বেন। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে অকাল মৃত্যু ও রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়িয়ে দেওয়াসহ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য বিরাট হুমকি তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনই কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৬০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৩১ শতাংশ শিশু ও তরুণ-তরুণী মুটিয়ে যাওয়ার কারণে নানা সমস্যায় আক্রান্ত হবেন।
গত তিন দশকে বিশ্বব্যাপী স্থূলতাজনিত সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে বলে বিশ্লেষণে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ২১১ কোটি এবং ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৪৯ কোটি ৩০ লাখ শিশু ও তরুণ-তরুণী ওজন বেশি বা স্থূলতায় ভুগছেন। এই সংখ্যা ১৯৯০ সালে ছিল যথাক্রমে ৭৩ কোটি এক লাখ ও ১৯ কোটি ৮০ লাখ।
স্থূলতাকে ‘সমাজের ব্যর্থতা’ উল্লেখ করে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষণার প্রধান লেখক এমানুয়েলা গাকিদু বলেন, বিশ্বে স্থূলতা যেভাবে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে, তা অবশ্যই অত্যন্ত দুঃখজনক।
গবেষণামতে, কেবল উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ল্যাটিন আমেরিকাতেই ২০৫০ সাল নাগাদ এক তৃতীয়াংশ শিশু ও তরুণ-তরুণী (প্রায় ১৩০ বিলিয়ন) স্থূলতায় ভুগবেন। যা দেশগুলোর সমাজ, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে শিশুরা আগের প্রজন্মের তুলনায় দ্রুত হারে ওজন বৃদ্ধি করছে এবং স্থূলতা অল্প বয়সেই দেখা দিচ্ছে বলে জানান গবেষকরা। তারা বলেন, এতে তরুণ বয়সেই টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন তারা।
উদাহরণস্বরূপ, উচ্চ-আয়ের দেশগুলিতে ১৯৬০-এর দশকে জন্মানো পুরুষদের মধ্যে যেখানে মাত্র ৭ শতাংশ ২৫ বছর বয়সে স্থূলতায় আক্রান্ত ছিলেন, সেখানে ১৯৯০-এর দশকে জন্মানোদের মধ্যে এই হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ শতাংশ। ২০১৫ সালে জন্মানো পুরুষদের মধ্যে এটি ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন গবেষকরা।
স্থানীয় সময় ৩ মার্চ ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দরিদ্র দেশগুলোকে স্থূলতার প্রভাব নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। গবেষকরা বলেন, উচ্চ বিএমআইয়ের (স্থূলতা) কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে অধিক সংখ্যক অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ওই দেশগুলোতে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাব থাকার কারণেই এমনটা ঘটেছে বলে মত দেন তারা।
ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফোরামের প্রধান নির্বাহী জোহানা রালস্টন বলেন, ‘স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সমাজের ওপর স্থূলতার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।’ সীমিত সম্পদের দেশগুলোর জন্য এই প্রভাব মোকাবিলা করা আরও চ্যালেঞ্জিং হবে বলে অভিমত দেন রালস্টন।