খুলনায় হোমিও চিকিৎসার আড়ালে রমরমা মদের ব্যবসা

বিষক্রিয়ায় পাঁচজনের মৃত্যু

by glmmostofa@gmail.com

খুলনা প্রতিনিধি।।

দীর্ঘদিন ধরেই খুলনায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার আড়ালে চলছে রমরমা রেক্টিফাইড স্পিরিট বা অ্যালকোহলের অবৈধ বিক্রি। তাতে শুধু শহর নয়, গ্রামগঞ্জে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে  এই অবৈধ ব্যবসা। সম্প্রতি বিষাক্ত এই তরল সেবনে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এক চিত্র। প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন ধরে চলা এ মরণফাঁদের কথা জানলেও কার্যকর পদক্ষেপ ছিল খুবই সীমিত এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা।

 

গত শনিবার (১৯ জুলাই) খুলনা নগরীর বয়রা পুজাখোলা ইসলামিয়া কলেজ মোড় এলাকায় বিষাক্ত মদপানে পাঁচজনের মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ঘটনাস্থলে তদন্তে নামে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও ওষুধ প্রশাসন। পরদিনই গ্রেফতার করা হয় হ্যানিম্যান হোমিও ফার্মেসির মালিক মোসলেম আলীকে।

পুলিশ জানায়, নিহতরা তার কাছ থেকেই রেক্টিফাইড স্পিরিট সংগ্রহ করেছিলেন।

জানা গেছে, বৈকালী বাজার এলাকার হ্যানিম্যান হোমিও ফার্মেসি ও শিশু মাতৃমঙ্গল চিকিৎসালয় দীর্ঘদিন ধরে চালাচ্ছেন মোসলেম আলী। হোমিও চিকিৎসার আড়ালে তিনি নিয়মিত রেক্টিফাইড স্পিরিট বিক্রি করতেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তার ছেলেসহ এর আগেও পুলিশ তাকে আটক করেছিল।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও নজরদারির অভাবে এমন ভয়ঙ্কর কার্যক্রম বছরের পর বছর ধরে চলেছে, যার ফলেই প্রাণ হারাতে হলো পাঁচজনকে।

খুলনা হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. এন এম শামীমুল ইসলাম মেডিভয়েসকে বলেন, ‘হোমিও চিকিৎসায় রেক্টিফাইড স্পিরিট ওষুধ তৈরির জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু কোনোভাবেই সরাসরি বিক্রি করা যাবে না। এটি গুরুতর অপব্যবহার। আমরা এর তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। মোসলেম আলীর কোনো বৈধ নিবন্ধন নেই। কিন্তু সে বহুদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।’

তিনি আরও বলেন, এটা শুধু মোসলেম আলীর সমস্যা নয়, হোমিওপ্যাথির আড়ালে আরও অনেকেই জড়িত। আমরা চিকিৎসক, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করেছি, প্রশাসনের আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।

‘আমরা বলছি আমাদের কোন ছাত্রও চিকিৎসক হওয়ার পর এমন কাজ করে তাকে কঠোর আইনের মধ্যে নিয়ে আসা হোক।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একাধিক সূত্র জানায়, খুলনা মহানগরী ও জেলার অন্তত কয়েক ডজন হোমিও দোকানে অবৈধভাবে রেক্টিফাইড স্পিরিট বিক্রি হচ্ছে। ৮ মে সোনাডাঙ্গা এলাকা থেকে ৫১০ বোতল স্পিরিট জব্দ ও একজনকে আটক করা হয়। ২০ ও ২১ জুলাই অভিযানে আরও ১২ বোতল জব্দ ও আটক করা হয় তিনজনকে।

তথ্য অনুযায়ী, জেলায় হোমিও ওষুধ বিক্রি বা চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক, অথচ নিবন্ধিত মাত্র ১৫৮টি।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার খন্দকার হোসেন আহম্মদ  বলেন, ‘মোসলেম আলীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গোয়েন্দা টিমও কাজ করছে। মাদকসেবী ও বিক্রেতারা প্রতিনিয়ত কৌশল বদলাচ্ছে। পুলিশও সজাগ রয়েছে।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের খুলনার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, গত তিন মাসে ৭৫০ বোতল রেক্টিফাইড স্পিরিট জব্দ করেছি। সাম্প্রতিক মৃত্যুর ঘটনায় সব দফতর মিলে আলোচনা হয়েছে। অভিযান চলছে।

খুলনা বিভাগীয় ওষুধ প্রশাসনের উপ-পরিচালক সুবর্ণ আহমেদ বলেন, আমরা মাঝে মাঝে অভিযান চালাই, কিন্তু আমাদের জনবল ও যানবাহনের তীব্র সংকট রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না থাকায় অভিযান চালাতে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর নির্ভর করতে হয় । ফলে অভিযান চালাতে গিয়ে কিছুটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com