নিজস্ব প্রতিবেদক।।
দেশের মেডিকেল কলেজসহ সরকারি চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মৌলিক বিষয়ের শিক্ষকদের মূল বেতনের সমপরিমাণ প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পরিবর্তে ৫০ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন নন-প্র্যাকটিসিং এসব শিক্ষক। চলতি অর্থ বছরেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
গত সোমবার (১৪ জুলাই) স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারীকে দেওয়া এক চিঠিতে এ তথ্য জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চিঠিতে অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের প্রবিধি-৩ শাখা থেকে পাঠানো এ চিঠিতে সই করেছেন উপসচিব সৈয়দ আলী বিন হাসান।
প্রবিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব দিলরুবা শাহীনা বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
২০১৯ সাল থেকে গ্রেডভিত্তিক নির্ধারিত হারে প্রণোদনা পাচ্ছিলেন মৌলিক আটটি মৌলিক আটটি বিষয়—অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফরেনসিক মেডিসিন, কমিউনিটি মেডিসিন, ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি ও প্যাথলজি বিষয়ের শিক্ষকরা। ৫০ শতাংশ হারে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে মাসিক মূল বেতনের অর্ধেক হারে প্রণোদনা পাবেন তারা। মৌলিক বিষয় না হলেও নন-প্র্যাকটিসিং হওয়ার সুবাদে অ্যানেস্থেশিওলজি ও ভাইরোলজি বিষয়ের শিক্ষকরাও পাবেন এই প্রণোদনা।
এর আগে এসব বিষয়ের শিক্ষকদের মূল বেতনের সমপরিমাণ প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গত ২১ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে অনুমোদন দিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
ওই সময়ে অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ‘শতভাগ প্রণোদনার বিষয়টির নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। তবে কখন থেকে কার্যকর হবে তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে। এসব বিভাগের শিক্ষকরা বাইরে প্র্যাকটিস করার সুযোগ পান না। ফলে শিক্ষক সংকট দেখা দেয়। এ সংকট কাটাতে প্রণোদনার ব্যবস্থা চলে আসছে।’
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকার সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশন, ১৯টি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষকদের অনুকূলে নন-প্র্যাকটিসিং ভাতা হিসাবে মূলবেতনের ১০০% হারে প্রণোদনা ভাতা প্রদানে অসম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।’
এতে আরও বলা হয়, ‘যেহেতু ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষকগণ অর্থ বিভাগের চলতি বছরের ১৪ মে ইস্যুকৃত স্মারক অনুযায়ী নন-প্র্যাকটিসিং ভাতা হিসেবে গ্রেডভিত্তিক মূলবেতনের ৫০% হারে মাসিক প্রণোদনা ভাতা পাবেন, সেহেতু বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশন এবং ১৯টি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষকদের অনুকূলে নন-প্র্যাকটিসিং ভাতা হিসেবে মূলবেতনের ৫০% হারে প্রণোদনা ভাতা প্রদানে সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।’
এক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এগুলো হলো—
১. সরকারি মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশন, সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান এবং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষকদের মাসিক প্রণোদনা ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে তাঁদের নিকট থেকে দাপ্তরিকভাবে নন-প্র্যাকটিসিং ডিক্লারেশন নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কোন শিক্ষক নন-প্র্যাকটিসিং ডিক্লারেশন দিতে ব্যর্থ হলে কিংবা প্র্যাকটিসিংয়ের সাথে জড়িত মর্মে প্রমাণিত হলে তিনি প্রণোদনা ভাতা প্রাপ্তির জন্য বিবেচিত হবেন না।৩. ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে এবং৪. ভাতা সংক্রান্ত ব্যয়ে ভবিষ্যতে কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।
এর আগে গত ১৪ মে অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের উপসচিব (প্রবিধি-৩ শাখা) মোসা. শরীফুন্নেসা ইস্যুকৃত চিঠিতে বলা হয়, ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের বেসিক সাবজেক্টে কর্মরত শিক্ষকদের অনুকূলে গ্রেডভিত্তিক মূলবেতনের ৫০ শতাংশ হারে মাসিক প্রণোদনা ভাতা প্রদানে শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।
প্রসঙ্গত, এতদিন অর্থ বিভাগের ২০১৯ সালের ১৮ আগস্টের স্মারক মারফত মঞ্জুরকৃত নির্ধারিত হারে শর্তসাপেক্ষে বেসিক সাবজেক্টের প্রণোদনা ভাতা দেওয়া হতো। ওই স্মারকে নবম গ্রেডে ১০ হাজার, অষ্টম গ্রেডে ১১ হাজার, সপ্তম গ্রেডে ১৩ হাজার, ষষ্ঠ গ্রেডে ১৫ হাজার, পঞ্চম গ্রেডে ১৬ হাজার, চতুর্থ গ্রেডে ১৮ হাজার এবং তৃতীয় গ্রেডে ২০ হাজার টাকা প্রণোদনা ভাতা নির্ধারণ করা হয়।
পরে ২০২০ সালে চিকিৎসা শিক্ষায় মৌলিক আটটি বিষয়ের বাইরেও অ্যানেস্থেশিওলজি বিভাগকেও প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হয়। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা-১ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এ তালিকায় ভাইরোলজি বিভাগও যুক্ত হয়।