৮২ শতাংশ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না

সংক্রমণ থেকে জরায়ুমুখের ক্যানসারের ঝুঁকি

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

নারীরা নির্ধারিত বয়সে পৌঁছানোর পর প্রাকৃতিক নিয়মে মাসিক চক্রের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে এখনো অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশের নারীরা। দেখা গেছে, স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না দেশের ৮২ শতাংশ নারী। আবার অনেক নারী মাসিক বা পিরিয়ডে সময় ‘সঠিক উপায়ে’ স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানেন না। একই প্যাড দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করেন এতে নারীর জরায়ু মুখের ত্বকে নানা সমস্যা ছাড়াও জরায়ু সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিই বৃদ্ধি পাচ্ছে না, অনেক কিশোরী শিক্ষা ও সামাজিক সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়া অপ্রাপ্তবয়সে বিয়ে এবং সুগন্ধিযুক্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের কারণে নারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি সংক্রমণের হারও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।

সোমবার (২১ এপ্রিল)  রাজধানীর এক হোটেলে নারীর শারীরিক সুরক্ষা ও মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে ‘ইনসিওরিং সেইফ মেন্সট্র–য়াল হাইজিন’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।

নারীর শারীরিক সুরক্ষা ও মাসিক স্বাস্থ্যবিধান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এবং স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড সেনোরা যৌথভাবে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে ওজিএসবি সভাপতি অধ্যাপক ফারহানা দেওয়ান, সংগঠনটির ওজিএসবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সালমা রউফ, সংগঠনটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম, অধ্যাপক সামিনা চৌধূরী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে নারীর মাসিক স্বাস্থ্যবিধানের ওপর করা ‘ ক্যান্টার -এর ২০২৪ সালের হাউসহোল্ড পেনিট্রেশন তথ্য উপস্থাপন করা হয়।  এতে বলা হয়,  দেশের ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ নারী পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। পুরনো কাপড়, তুলা কিংবা রাসায়নিক সুগন্ধিযুক্ত ভ্যাজাইনাল প্রোডাক্ট ব্যবহারের কারণে ৯৭ শতাংশ নারী। তাদের জীবদ্দশায় কোনো না কোনো সময় সার্ভিকাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হন।

এছাড়া, দেশে ৬৮ শতাংশ কিশোরীর প্রথম পিরিয়ড শুরুর মাত্র চার বছরের মধ্যে বিয়ে হয়ে যায়, যা তাদেরকে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়। একইভাবে, ৪০ শতাংশ স্কুলছাত্রী মাসিকের সময় গড়ে তিন দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকে, যা তাদের শিক্ষাজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, পোশাক শিল্পে কর্মরত প্রায় ৬০ লাখ নারী কর্মী পিরিয়ডের সময় গড়ে ছয় দিন কাজে অনুপস্থিত থাকেন, যা শুধু তাদের আর্থিক অবস্থার উপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না, বরং শিল্পখাতের উৎপাদনশীলতাকেও ব্যাহত করে।

অধ্যাপক ফারহানা দেওয়ান বলেন, দেশে মানসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারীর সংখ্যা খুবেই কম। আবার যারা এটি ব্যবহার করেন তারা আবার এর সঠিক ব্যবহার ও সময় সম্পর্কে সচেতন নয়। এ বিষয়ে পরিবার থেকে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মালিক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, ২০১৫ সালে চার’শ পরিবারের ওপর করা আমাদের এক জরিপে দেখা গেছে, ৫ শতাংশ বাবা মেয়েকে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে দেয়, এক শতাংশ ভাই বোনের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ৬০ শতাংশ নারীকে নিরাপদ মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে চাই। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা দুই হাজার স্কুলের সাত লাখ নারী শিক্ষার্থী ও ৫০০ গার্মে সের দেড় লাখ নারী কর্মীদের হাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দিতে চাই।

অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম বলেন, অনেকক্ষণ একই প্যাড পরে থাকলে দুর্গন্ধ হয়। রক্ত অনেকক্ষণ আবদ্ধ থাকায় পচনের সৃষ্টি হয় এবং এর থেকে সংক্রমণ দেখা দেয়। এই সংক্রমণ জরায়ু পর্যন্তও বিস্তৃত হয়।

তিনি বলেন, সংক্রমণ জটিল আকার ধারণ করলে ডিম্বনালি পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে, ফলে সন্তান ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। মারাত্মক পরিস্থিতিতে দেহে প্রবাহিত রক্তেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমন অবস্থায় ওই ব্যক্তির জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে। আবার জরায়ুমুখের সংক্রমণ থেকে জরায়ুমুখের ক্যানসারও হতে পারে বলেও জানান তিনি।।

 

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com