দেশের ঔষধ শিল্পে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের বিরুপ প্রভাব পড়বে: শিল্প সমিতি

অতি দ্রুত নিবন্ধন পেলে মেধাস্বত্ব আইন থেকে রেহাই পাবে এক হাজার ওষুধ

by glmmostofa@gmail.com
নিজস্ব প্রতিবেদক।। 
আগামী বছরের (২০২৬ সাল)  নভেম্বরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হতে যাচ্ছে। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বাণিজ্যবিষয়ক মেধাস্বত্ব আইন (ট্রিপস) চুক্তি পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। তখন ওষুধ কোম্পানিগুলোকে উচ্চ হারে রয়্যালটি দিতে হবে অথবা পেটেন্ট নিতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে, যা কঠিন ও ব্যয়বহুল। এজন্য ওষুধ কোম্পানিগুলো এক হাজারের মত নতুন ওষুধ নিবন্ধনের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে আবেদন করেছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দুই বছরের বেশি সময় ধরে নতুন ওষুধের নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে আছে। এসব ওষুধ আগামি সাড়ে তিন মাসের মধ্যে নিবন্ধন করতে না পারলে ট্রিপস মেনে আনতে হবে। তাতে ওষুধের দাম বাড়তে পারে। রোগীদের চিকিৎসা ব্যায় বেড়ে যাবে। এমন বাস্তবতায় সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত  বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের এক মতবিনিয়ম সভায় এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঔষধ শিল্প সমিতির (বাপি) মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন, সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইউনিমেড ইউনিহেলথের চেয়ারম্যান এম মোসাদ্দেক হোসেন, রেনাটা লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ কায়সার কবির, সমিতির সিইও মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিইও মুহাম্মদ হালিমুজজামান, সমিতির সদস্য ও এ নিপরো জেএমআই ফার্মার এমডি, মো. আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরোণ ছাড়াও বাংলাদেশ আরেকটা কনভেনশনে (নভেলটি কনভেনশন) স্বাক্ষর করা আছে। যা চলতি বছরের নভেম্বরে শুরু হবে। এই চুক্তি অনুসারেও পর নতুন কোনো ওষুধ আনতে ট্রিপস চুক্তি পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। ফলে সাড়ে মাস পর নতুন ওষুধ আনতে কোম্পানিগুলোকে উচ্চ হারে রয়্যালটি দিতে হবে। অথবা পেটেন্ট নিতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে, যা ব্যয়বহুল। এদিকে এক হাজারে ওষুধ নিবন্ধনের অপেক্ষায় করছে। যারমধ্যে ৭১৫টি ওষুধের ফাইল দেখেনি ঔষুধ প্রশাসন। ৪০০টি মতো ওষুধ আনা যায় বলে সুপারিশ করেছে। বাকিগুলোর বিষয়ে এখনও কিছুই জানায়নি। ওষুধ প্রশাসন এটা দুই বছরের বেশি সময় ধরে ঝুঁলিয়ে রাখছে। আমরা বলছি নভেম্বরের সব ওষুধের নিবন্ধন দিয়ে দিতে। বাংলাদেশে যাতে পরে বলতে পারে আমাদের নিবন্ধিত ওষুধ মেধাস্বত্ব আইন প্রয়োগ হবে না।
সৈয়দ কায়সার কবির বলেন, স্বল্পোন্নত দেশে প্রবেশ শুধু ওষুধ শিল্পের জন্য খারাপ তা নয় এটা গোটা বাংলাদেশের জন্য খারাপ হবে। প্রথমত; ট্রিপস সুবিধা বঞ্চিত হবে। দ্বিতীয়ত; স্বল্প সুদে ঋণ পাবে না। তৃতীয়ত; ওষুধের ওষুধে পেটেন্ট সুবিধা মিলবে না। তাই এলডিসি তালিকা থেকে উন্নয়শীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ পিছিয়ে পড়বে।তিনি বলেন, কম্বোডিয়া ও সেনেগালের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে তারা গ্রাজুয়েশনে গেলেও ট্রান্সজিশন পিরিয়ডে বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশের সে বিষয়ে আগ্রহ নেই। এখন দরকার প্রথমে গ্রাজুয়েশনটা ঠেকানো। কোন কারণে যদি এলডিসি গ্রাজুয়েশন পেছানো না যায় অন্তত ট্রান্সজিশন পিরিয়ডটা তিন চার বছর পেছানো উচিত। যেমেনটা সেনেগাল বা কম্বোডিয়া করেছে। আমরা বুঝতে পাচ্ছি, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন চায়না এই শক্তিটা আমাদের কাছে থাকুক। আমাদের এখন বেশি প্রয়োজন উন্নয়শীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়া। যদি এই সরকার না করে তাহলে নির্বাচিত সরকার যেনো আসার পর এটা করে।

তিনি আরও বলেন, ওষুধ শিল্প সমিতি স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের কাছে যে সুপারিশ করেছে সেটা আমলে নেয়নি। তারা নিজেদের মধ্যে একটা সুপারিশ দিয়েছে ওষুধ শিল্প সংস্কারে। সংস্কার কমিশন ওষুধ শিল্পকে ১৯৮০ সালে নিয়ে যেতে চায়। তারা আমাদের উন্নতি চায় না।
গ্যাস সংকট ও জায়গা সংকটে দাঁড়াতে পারছেনা এপিআই পার্ক: সরকার মতবিনিময় সভায় জানানো হয় ২০০৭ সালে ওষুধের মূল কাঁচামাল অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) শিল্প তৈরির উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার বাউসিয়া এলাকায় ২০০ একর জমি বরাদ্দ দেয়। নাম দেওয়া হয় ‘এপিআই শিল্পপার্ক’। পার্কের জমি ২৭টি ওষুধ কোম্পানিকে ৪২টি প্লটে ভাগ করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কোনো কোম্পানি একাধিক প্লট বরাদ্দ নেয়। কিন্তু গত দেড় দশকে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান সেখানে কাজ শুরু করেছে।
এ বিষয়ে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেন বলেন, কোম্পানিগুলো ২০১৭ সালে প্লট বরাদ্দ পাওয়ার টেকনোলজি আদান-প্রদানে ভারত, চীনসহ বেশ কিছু দেশে যোগাযোগ করে। চীনারা প্লট দেখে জানায় আকার খুবই ছোট। এছাড়া এপিআই রিঅ্যাক্টর, স্টোরেজ ও সলভেন্সির জন্য যে ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) দরকার পার্কে সব ধরনের সুবিধা নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্যাস সরবরাহ নেই। ফলে অনেক কোম্পানি যায়নি। যারা যাচ্ছে না তাদের প্লটগুলো একসঙ্গে করে কয়েকটি কোম্পানি কাজ শুরুর চেষ্টা করছে। সরকার নীতিমাল সংশোধন করে দিয়েছে। এখন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের যাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করা যায় ২০২৬ সালের মধ্যে ১০ থেকে ১২টা কোম্পানি ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিতে টাস্কফোর্স গঠন: ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, জাতীয় পর্যায়ে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা প্রণয়ন ও জনগণের জন্য তা সহজলভ্য করতে করণীয় নির্ধারণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করেছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলমকে আহ্বায়ক করে মোট সদস্য সংখ্যা ১৬ জনের এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের প্রতিনিধিরা থাকলেও ওষুধ শিল্প সমিতির কেউকে রাখা হয়নি। সরকার আমাদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি বলেও জানান ঔষধ শিল্প সমিতির নেতারা।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com