নিজস্ব প্রতিবেদক।।
নতুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন প্রধানমন্ত্রীর আস্থার প্রতিদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। একইসঙ্গে শুধু ঢাকা শহর নয়, টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
তার ভাষায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা রেখে মন্ত্রিত্ব দিয়েছেন। আমি তা যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করব।সাধারণ মানুষ যেনো স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। সে লক্ষ্যে নিয়ে আমি কাজ করবো।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রতিশ্রুতি কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন নতুন এ মন্ত্রী।
অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক। তিনি বাংলাদেশ প্লাস্টিক সার্জন সোসাইটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসাসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি তাঁকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।
প্রথম যখন জানতে পারলেন আপনাকে মন্ত্রী করা হচ্ছেন সে সময় আপনার অনুভুতি কেমন ছিল?
জবাবে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমি মন্ত্রী হবো এ কথা শুনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। রাতে যখন টেলিফোন আসলো। ওপাশ থেকে বলা হলো আপনাকে অভিন্দন! এরপর থেকে আমি নার্ভাস ছিলাম। কারণ এটা আমার মাথায় কোন দিনেই ছিল না, জীবনেও আমি চিন্তা করিনি। পরে আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, আমি কি করবো? আমি কিছু বুঝতে পারছি না। তখন আবার একবার মনে হলো এটা ফেইক টেলিফোন। এরপর যখন টিভিতে আমার নাম বললেন তখন আমি নিশ্চিত হলাম।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনার কোন নিজস্ব পরিকল্পনা আছে কিনা, যদি থাকে সেটা কি?এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. সামন্ত লাল সেন জানান আগামী রবিবার মন্ত্রী হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ে যোগদান করবো। যোগদানের পর দেখবো স্বাস্থ্যখাতে কোথায় কি কি সমস্যা আছে। তবে আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, আমাদের স্বাস্থ্যখাতটাতে ঠিক করতে হলে প্রথমে আমাদের চিকিৎসক সমাজকে ভালোভাবে রাখতে হবে। আমি যদি ভালো না থাকি, আমি ভালো সেবা দিতে পারবো না। চিকিৎসক সমাজের অনেক কষ্টের কথা আমি শুনি। বিশেষ করে তরুণ চিকিৎসকরা। অর্থাৎ আমি যাকে দিয়ে কাজ করাবো তাকে যদি আমি শান্তিতে না রাখি তাহলে আমি কাজ আদায় করবো কিভাবে?
মাঠ পর্যায়ে দীর্ঘ সময় আপনার কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনি মনে করেন, চিকিৎসাখাতে কোন পরিবর্তন দরকার আছে। যদি থাকে সেটা কি? সেই প্রশ্নের উত্তরে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দৌরগোড়ায় পৌছে দেওয়া। আমি সে স্বপ্নটাকে বাস্তবায়নে চেষ্ঠা করবো। যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা ভালো চিকিৎসা পায়। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। এটা হলো আমার প্রধান লক্ষ্য। আমি যে শুধু ঢাকা শহর নিয়ে ব্যস্ত থাকবো সেটা না। আমার ব্যস্ততা টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া। আমি কিন্তু এক সময় সারা বাংলাদেশে ঘূরেছি। আমি জানি কোথায় কি কষ্ট। মানুষের কি অবস্থা। টেকনাফ কিংবা বাটগ্রামেও যদি একটা ভালো হাসপাতাল থাকে, ভালো সুবিধা থাকে অবশ্যই চিকিৎসক সেখানে কাজ করবে। আমি যদি তাকে সাপোর্ট দিতে পারি কাজ করবে না কেন? নিশ্চিই করবে।
দেশের স্বাস্থ্যখাতে বর্তমানে কি ধরণের চ্যালেজ্ঞ আছে বলে মনে করেন, চ্যালেজ্ঞ গুলো কিভাবে মোকাবিলা করতে চান? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, জনগণের দৌরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দেওয়া ও দুর্নীতি বন্ধ করায় এখন বড় চ্যালেঞ্জ। দুর্নীতি কোথায় হয়, কিভাবে হয় সেটা ভালোভাবে ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। আমি চাই না কোথাও দুর্নীতি হোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা বিরাট আস্থা নিয়ে আমাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বানিয়েছে। এতো লোকের মাঝে আমাকে বেচে নিয়েছেন। সুতরাং, ওনার একটা প্রত্যাশা আছে। আমি চেষ্ঠা করবো যেনো ওনার প্রত্যাশাটা যেভাবেই হোক পূরন করতে পারি।
আমাদের পাশ্ববর্তী দেশে চিকিৎসা মান অনেক উন্নত। দেশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত বিত্তরা প্রতিনিয়ত সেখানে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। এতে দেশের অনেক অর্থ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে এমন পরিস্থিতিতে বিদেশমুখী চিকিৎসা সেবা বন্ধ করতে বড় কোন পরিকল্পনা রয়েছে কিনা?
জবাবে নতুন এ মন্ত্রী বলেন, একটা উদারণ দেই; কিছু দিন আগে ভূটান গিয়েছিলাম। ১৪ সদস্যের টিম নিয়ে। আমরা সেখানে ১৮ টা অপারেশন করে এসেছি। বর্তমানে ভুটান থেকে একটা রোগী বাংলাদেশে এসেছে চিকিৎসার জন্য। আমরা সরকারিভাবে তার অপারেশন করেছি। সরকারিভাবে বাংলাদেশে কোন বিদেশি রোগীর চিকিৎসা এটাই প্রথম। এ বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও জানেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রীও জানেন। সুতরাং আমরা চেষ্টা করছি, বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন করতে। আমি মনে করি আমি যদি আমার দেশের চিকিৎসকদেরকে ভালো সুযোগ-সুবিধা দিতে পারি তারা বিশ্বমানের যে কোন কাজ করতে পারবে এটা আমার বিশ্বাস।
একজন চিকিৎসক থেকে সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়া কতটা সম্ভব বলে মনে করেন? তার উত্তরে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, চিকিৎসক সমাজ, মন্ত্রণালয় সবাই মিলে যদি কাজ করি তাহলে সম্ভব। এক্ষেত্রে পিয়ন থেকে সর্বোচ্চ পর্যন্ত অংশগ্রহণ জরুরি। সবাই মিলে করলে সফলতা অসম্ভব নয়।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেনকে ফুলেল শুভেচ্ছার মাধ্যমে বরণ করে নিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেনের বাসায় ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তারা।
শুভেচ্ছা জানানোর সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবির, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামসহ অন্যান্য চিকিৎসক-কর্মকর্তারা।
তার আগে সন্ধ্যায় শপথ গ্রহণের পর মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ—কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন তা উল্লেখ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।