নিজস্ব প্রতিবেদক।।
দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের তথ্য দিতে স্বাস্থ্য বিভাগের সব বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে এই তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান এ আদেশ জারি করেন।
আদেশে এতে বলা হয়েছে, আপনার নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকায় অবস্থিত অনিবন্ধিত (লাইসেন্স বিহীন) বেসরকারী হাসপাতাল/ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাংকের তালিকা বিনা ব্যর্থতায় ০৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকার বরাবর প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে এই আদেশটি জারী করা হলো।
খতনা করাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার পর অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খৎনা করাতে সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের নার্সারির শিক্ষার্থী শিশু আয়ানকে। এ সময় তাকে ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে খৎনা করা হয়।পরে অপারেশনের কয়েক ঘণ্টা পরও জ্ঞান না ফিরলে আয়ানকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ৮ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত ৭ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাতে আয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় হাসাপাতালের দুই ডাক্তার ও পরিচালককে আসামি করে রাজধানীর বাড্ডা থানায় মামলা দায়ের করেন শিশুটির বাবা মো. শামীম আহামেদ। শিশুদের পরিবারের অভিযোগে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তদন্ত কমিটি পরিদর্শনকালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রদত্ত লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয়। পরে লাইসেন্স নবায়ন এবং জরুরি কাগজপত্র না থাকায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব ধরনের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এছাড়া দপ্তরের অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা এবং পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় যে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে কোন প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিকট নিবন্ধন/লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য কখনোই অনলাইন আবেদন করেনি। প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রকার আইনানুগ নিবন্ধন অথবা লাইসেন্স ব্যতিরেকে চিকিৎসা সেবা নির্মাণাধীন ভবনে পরিচালনা করে আসছে, যা সরকারের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে এ আদেশ জারি করা হলো।
এছাড়াও শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করেন। রিটে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে। সোমবার সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে শিশু আয়ানের মৃত্যুতে তার পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সেই প্রশ্নে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট। পাশাপাশি সারা দেশে অনুমোদনহীন কতগুলো হাসপাতাল রয়েছে, সেই তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয় আদালত। এ সংক্রান্ত এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লার বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি করেন।