নিজস্ব প্রতিবেদক।।
আজ রোববার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালন করা হবে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস।যদিও বাংদেশে ক্যানসার রোগী সংখ্যা কত- এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান সরকারের হাতে নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান গ্লোবক্যানের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর দেড় লাখের মতো মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে মারা যাচ্ছে এক লাখ ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ। আবার আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে ক্যান্সারে রোগীর সংখ্যা ৭৫ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে মর্মে হুশিয়ারি উচ্চারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এমন পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে একদিকে অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ব্যয়বহুল। কারণ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় হরমোন থেরাপি থেকে শুরু করে রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি এবং অনেক ঔষধের প্রয়োজন হয়। আবার প্রতিটি ধাপেই বড় অংকের টাকা খরচ হয়। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে দেশের মানুষের একটি বড় অংশ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে। আবার রোগীরা খরচ বহন করতে গিয়ে যেমন নিঃস্ব হচ্ছেন তেমনি চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
তারা বলছেন, ফুসফুস, শ্বাসতন্ত্র এবং মুখের ক্যানসারসহ অন্তত ১২ ধরনের ক্যানসার সৃষ্টি করে থাকে। এছাড়া খাদ্যে ভেজাল, , খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, মদ্যপান করা, স্থুলতা, তামাক (পান, জর্দা, সুপারি খাওয়া) ব্যবহারজনিত ব্যবহারে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। পরোক্ষ ধূমপানেও ক্যানসার হতে পারে। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধে সতেচনতার পাশাপাশি স্ক্রিনিংয়ের উপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. নাজির উদ্দিন মোল্লাহ বলেন, খাওয়া দাওয়ার সমস্যার কারণে আমাদের পরিপাক তন্ত্রের ক্যান্সার ,কিডনি ক্যান্সার এসব বেড়ে যাচ্ছে। আর কিছু জিনেটিক কারণে হয়ে থাকে। তাতে কিছু করারও থাকে না একটু সূযোগ পেলেই আক্রমণ করে বসে। আর কিছু ভাইরাস আছে যেমন জরায়ুমুখের ক্যান্সার তার ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। এর ফলে এটি কমে আসবে।
তিনি বলেন, জরায়ুমুখের ক্যান্সার অনেক নারী ধার্মিক হওয়া কিংবা লজ্জা বেশি পাওয়ায় কাউকে বলতে পারেনা। সর্বশেষ কোনো সহ্য না করতে পেরে এরপর বলে। তখন একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে আসে, তাদের আর বাচানো সম্ভব হয়না। তাদের ক্যন্সার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ শুরুতে আসলে সহজেই এই রোগ থেকে নিরাময় করা সম্ভব হবে। রেডিও, ক্যামো এবং হরমোন থেরাপির মাধ্যমে শতভাগ সিউর করা সম্ভব হয়। তাই শুরুতে শনাক্ত করা এই ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন। সেজন্য স্ক্রিনিংয়ের প্রয়োজন অনেক বেশি।
ভেজাল খাদ্য গ্রহনে ক্যান্সার হচ্ছে এই বিষয়ে কি করা উচিৎ জানতে চাইলে বিএসএমএমইউর এই চিকিৎসক বলেন, সরকারের উচিৎ ভেজাল খাদ্য নিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। ভেজাল খাদ্য পাওয়া গেলে প্রয়োজনে মৃত্যুদন্ড ও দেয়ার আইন করতে হবে। কারণ তাদের কারনে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে তাহলে তাদের মৃত্যুদন্ড দিলে ভূল কিছু হওয়ার কথা না। কারণ খাদ্যে ভেজাল, খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, মদ্যপান করা, তামাক (পান, জর্দা, সুপারি খাওয়া)।
যন্ত্রপাতির অনেক বেশি সংকট জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ক্যান্সার চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যন্ত্র হচ্ছে রেডিওথেরাপি মেশিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটা মেশিন দরকার। সে হিসেবে আমাদের ১৬ কোটি মানুষের জন্য ১৬০ টা মেশিন থাকা দরকার। আর চিকিৎসা সেবা সহজ করতে প্রয়োজন ২০০ টি মেশিন। তবে সরয়াক্রী বেসরকারী মিলিয়ে বাংলাদেশে আছে মাত্র ২০ টি মেশিন। এর অর্ধেকের বেশি আবার নষ্ট। বিএসএমএমইউতে একটি মেশিন আছে। সবসময় সচল থাকেনা, মাঝে মাঝে নষ্ট ও থাকছে। আরেকটি মেশিনের প্রক্রিয়া চলছে তবে কখন আসে জানা নেই।
ডা. নাজির উদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে অত্যাধুনিক মেশিন লিনিয়ার এক্সেবেটর রেডিওথেরাপির জন্য। জরায়ুমুখের চিকিৎসায় একটা ব্রাকিথেরাপি মেশিন আছে। ক্যামো থেরাপির জন্য আকটা ক্যামো ডে কেয়ার সেন্টার আছে সেখানে ২০ জনের মতো রোগী প্রতিদিন থেরাপি নেয়। এখানে ৬০ টির মতো বেড আছে ওয়ার্ডে।
ওষুধের ব্যায় অনেক বেশি তবে আগের থেকে কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের অনেকগুলো কোম্পানি এখন ক্যান্সারের ওষুধ তৈরি করছে। এজন্য কিছুটা ব্যয় কমেছে। আগে যেখানে ৩০ হাজার লাগতো সেখানে ১০ হাজার লাগছে। তবে কাচামাল দেশে তৈরি করা গেলে আরো খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। বাংলাদেশ ফ্রান্স ,ইতালি সহ বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসে। সরকারকে বলবো ভূর্তকির ব্যবস্থা রাখে। আগে বিএসএমএমইউতে কিছু ওষুধ ফ্রি দিতো চাহিদা অনুযায়ী। আমরা গরীব রোগীদের ফ্রিতে দিতে পারতাম। প্রধানমন্ত্রীর একটি তহবিল আছে সেখান থেকে কিছু রোগীকে ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়। সমাজকল্যান অফিস থেকে আসলে সেক্ষত্রে কিছু পেয়ে থাকে। তবেব এসব অপ্রতূল। ২০ লাখ রোগীর জন্য এতি একেবারেই কম। আর ভারতে কাচামাল, ওষুধ নিজেরা উৎপাদন করে। আর জন গুরুত্বপূর্ন হলে সেটি সরকার কিনে নিয়ে কম দামে মার্কেটে ছেড়ে দেয়। এর মাঝে ক্যানাসারের ওষুধ একটি। এর কারণে যেটি আমাদের দেশে ১০ হাজার টাকা সেখানে ১ হাজার টাকায়ই পাওয়া যায়।