নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের আগে স্যালাইন দেওয়ার পর দুই নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।অসুস্থ হয়ে পড়া আরও দুই নারী ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি আছেন বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আনোয়ারুল কবির।
দুইজনের মৃত্যুর বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রশাসনের কাছে স্বীকার করেছে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দুই সপ্তাহ আগে এসব ঘটনা ঘটলে শুক্রবার তা প্রকাশ পায়। পরে সন্ধ্যায় রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মৃত্যুর ঘটনার পর ওই স্যালাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য পরিচালক আনোয়ারুল কবির বলেন, “স্বাস্থ্য বিভাগকে ঘটনাটি না জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্যায় করেছে। এটা খুবই স্পর্শকাতর ব্যাপার। আমাদের জানানো উচিত ছিল। আমরা জানতে পারলে আমাদের মত করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারতাম। তারা কেন এটা লুকিয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।”
বিষয়টি শোনার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল; তারা দুইজন মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান তিনি। স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, ঘটনার বিস্তারিত জানতে তাদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। শনিবার তারা প্রতিবেদন দিতে চেয়েছে। সেটি পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালটির পরিচালক চিকিৎসক সানাউল হক মিয়াকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে হাসপাতালের ইনচার্জ ইলিয়াস হোসেন বলেন, “ঘটনা তদন্তে কমিটি হয়েছে। তারা কাজ করছেন।”
মারা যাওয়া নারীদের মধ্যে একজন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আনুলিয়া গ্রামের আফজাল হোসেনের স্ত্রী আসমা খাতুন (৩৮)। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন। অপর নারীর বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায়। তবে তার নাম পরিচয় জানাতে চান না স্বামী। তিনি সাংবাদিককে বলেন, “ভাগ্যে মৃত্যু ছিল, হয়ে গেছে। এসব বলে আর লাভ নাই।”
আসমা খাতুনের স্বামী আফজাল হোসেন বলেন, আসমা প্রথমবার গর্ভধারণ করেছিলেন। এক বছর ধরে প্রতি মাসে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুলতানা নাজনীন রিতার কাছে চেকআপ করাতেন তিনি। “সন্তান প্রসবের সময় হলে ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় আসমা খাতুনকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আসমা খাতুন ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।
“শিশু সুস্থ থাকলেও আসমার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। রাত ৪টার দিকে চিকিৎসকরা জানান আসমার দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে পড়েছে। হার্টের কার্যক্ষমতাও কমে গেছে।”
চিকিৎসকদের এমন কথা শুনে আফজাল হোসেন বলেন, “গর্ভধারণের পুরোটা সময়ই মাসে মাসে আসমাকে চেকআপ করিয়েছি। তখন কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। হঠাৎ করে এখন এত সমস্যা কেন? চিকিৎসকরা তখন জানান, এটা স্যালাইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।”
রাত সোয়া ৪টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্সে করে আসমাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার ১৫ মিনিট পর মারা যান বলে জানান তিনি।
আফজাল হোসেন বলেন, “আসমার মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মোটা টাকার বিনিময়ে আপস করার প্রস্তাব দেয়। তবে আমি তা করি নাই। আমার স্ত্রীর মৃত্যুর বিচার চাই।”
এ ঘটনায় মামলা করার কথা জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুলতানা নাজনীন রিতার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান হাসপাতালটির সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, “স্যালাইন দেওয়ার পর কয়েকজন রোগীর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করছি। ওই স্যালাইনটা আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।”
রাজশাহী সিভিল সার্জন আবু সাইদ মো. ফারুক বলেন, “ঘটনাটি শোনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সব তথ্য চাওয়া হয়েছে। গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আরও পড়ুন: কলেরার প্রাদুর্ভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বৈশ্বিক কর্মসূচি ঘোষণা