চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে স্থাপন করা হচ্ছে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। আগামী দুই মাসের মধ্যে ১৫০ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নির্মাণকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। চীনের অর্থায়নে নির্মিত হতে যাওয়া বিশেষায়িত ইউনিটটির চলতি মাসে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (৬ জুলাই) প্রস্তাবিত হাসপাতালের গোয়াছিবাগান এলাকা পরিদর্শনে এসে এমন তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। প্রকল্পটি নিয়ে কয়েকদিন আগেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। চীন সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী এই মাসেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারেন। সেপ্টেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হবে। দুই বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৫০ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটটি নির্মাণে ব্যয় হবে ২৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১৮০ কোটি টাকা। বাকি ১০৫ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। গত ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।এ ইউনিটের মধ্যে থাকছে শিশুদের জন্য ৫টিসহ মোট ২০টি বার্ন আইসিইউ বেড, ২৫টি এইচডিইউ বেড এবং ৩টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। রোগী আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য থাকবে তিনটি রাস্তা।
ছয়তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের ইউনিটটির প্রথম তলায় থাকবে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি। দ্বিতীয় তলায় তিনটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি), নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয় তলায় হাইডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), চতুর্থ এবং পঞ্চমতলায় থাকবে সাধারণ ওয়ার্ড, ষষ্ঠতলায় ওয়ার্ডের সঙ্গে থাকবে অফিস।
চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার সরকারের দেয়া প্রস্তাবে চীনা প্রতিনিধি দল ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেন। এর পরের কয়েক বছরে চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের কয়েক দফা বৈঠক হলেও হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা আটকে ছিল স্থান নির্বাচনেই। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে চীন সরকার চমেক হাসপাতাল এলাকার গোঁয়াছি বাগান এলাকায় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্র তৈরির স্থান নির্বাচন করে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের জানায়। এরপর গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে চট্টগ্রামে এসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, ভবনের নকশা অনুযায়ী সবকিছু পরিমাপ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যাচাই করে চীনা প্রতিনিধিদল। ওই বছরের ৩০ মার্চ এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।
এরপর চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সফরে এসে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করার ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ।
এদিকে, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন আজ শনিবার (৬ জুলা) বিকেলে চট্টগ্রামের গোলপাহাড় মোড়ের মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করেন। অকস্মাৎ এই পরিদর্শনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নানা প্রকার অসংগতি দেখতে পান। এন্ডোসকপি এবং কোলনোস্কোপি বিভাগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী গিয়ে দেখেন এই ধরনের ডায়াগনোসিস করার মতো সক্ষমতা তাদের নেই। অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল খালি। সাথে পর্যাপ্ত এয়ারটিউব ছিল না। এন্ডোসকপি করার জন্য যথাযথ বিছানা ছিল অনুপস্থিত। এমনকি এনেস্থিসিয়ার মতো জরুরি ওষুধ এবং কর্তব্যরত কোন ডাক্তার ছিল না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এসব অনিয়ম দেখে সাথে সাথে মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এন্ডোসকপি এবং কোলনস্কপি বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
এ বিষয়সহ অন্যান্য অনিয়মগুলো অধিকতর তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসানকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরীকে চট্টগ্রামে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান, চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরীসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।