ভুল চিকিৎসায় প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই শাস্তি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।। 

সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ভুল চিকিৎসার প্রমাণ পাওয়া গেলে অথবা চিকিৎসায় অবহেলা ধরা পড়লে প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে। লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানকে চিকিৎসা চালাতে দেওয়া হবে না।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএইচআরএফ) সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।এতে মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকেরা স্বাস্থ্য খাত ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের কথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন। এর মধ্যে ছিল কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানহীন মেডিকেল শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, রোগ শনাক্তের পরীক্ষায় দুর্বলতা, সংসদে চিকিৎসা বিষয়ক আইন পাস না হওয়া, সরকারিভাবে স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ রাখা, সরকারি খাতে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা কম হওয়া, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর চিকিৎসক নেতাদের চাপ, নগর ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় সমন্বয়হীনতা, ডেঙ্গুর প্রকোপ ইত্যাদি।

একপর্যায়ে সভাকক্ষে ঢুকে পড়েন বাড্ডার সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার পর মারা যাওয়া শিশু আয়ানের বাবা ও আত্মীয়েরা। তাঁরা আয়ানের খতনার সময় ও খতনা পরবর্তী চিকিৎসার সময় কী ঘটেছিল তা বর্ণনা করেন এবং আয়নের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
সামন্ত লাল সেন তাঁদের কথা শোনেন। তিনি আয়ানের বাবা ও সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি দুঃখ বুঝি। আমি কথা দিলাম, চিকিৎসায় কোনো অবহেলা হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আপনার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?’ উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক প্রত্যাশা। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীদের নানা রকম ভোগান্তির কথা নিজের অভিজ্ঞতার কথাও জানান অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষের কষ্ট আমি কাছ থেকে দেখেছি। আমি কিছু ভুলব না। প্রত্যেক রোগী যেন বেডে (শয্যা) থেকে চিকিৎসা নিতে পারে তার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব। সকলে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করলে এটা সম্ভব।
তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করব এগুলো নিয়ে কাজ করতে, তবে এ জন্য আমার সময় লাগবে। ইট উইল টেক টাইম, একদিনে হবে না। সবাই আমাকে সহযোগিতা করলে সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব। আশা করি, আপনারা সবাই আমাকে সহযোগিতা করবেন। বিশেষ করে মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সকলে মিলে সহযোগিতা করলে আমি এসব সমস্যার সমাধান করতে পারব।
সামন্ত লাল সেন বলেন, বাংলাদেশে অনেক ভালো মানের চিকিৎসক আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের দিয়েই আমরা একটা পরিবর্তন আনতে পারব বলে বিশ্বাস করি। আমার একার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়। আমি কেবল জয়েন করেছি, একটু সময় নিই।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমি বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে এই পর্যন্ত এসেছি, এর পেছনে আপনাদের (সাংবাদিকদের) অনেক অবদান আছে। আমি সারাজীবন যেভাবে কাজ করে গিয়েছি, এখনও আমার ইচ্ছা থাকবে সেভাবেই যেন কাজ করতে পারি। আমি সারাজীবন আপনাদের দাদা হয়েই থাকতে চাই, স্যার হতে চাই না। আমার প্রতি আপনাদের প্রত্যাশা আর সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

গবেষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীও গবেষণার ব্যাপারে সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। এমনকি তিনি সবসময় বলেও থাকেন যে, দেশে ভালো মানের রিসার্চ হয় না। তিনি আইপিএইচের কথাও বলেন। আমি এ বিষয়গুলো দেখব। আমি কিন্তু অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে খুবই কঠোর হব। আমি কখনই এ বিষয়ে ছাড় দেব না।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গ্যাভির মাধ্যমে সরকার করোনার টিকা সংগ্রহের কাজ শেষ করেছে। এই টিকা এপ্রিল মাস থেকে দেওয়া শুরু হবে। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে আড়াই কোটি মানুষকে চতুর্থ ডোজ হিসাবে এই টিকা দেওয়া হবে।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com