নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘ ৩৭ বছর পর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডির পদ থেকে পদত্যাগ করলেন নাজমুল হাসান পাপন করেছেন। মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ায় একইসঙ্গে বেক্সিমকো ফার্মার পরিচালকের পদও ছেড়েছেন তিনি।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মার পক্ষ থেকে রোববার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে বঙ্গভবনে শপথ নেন নাজমুল হাসান। তিনি বর্তমান সরকারের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। তাই স্বেচ্ছায় বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সদস্যপদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
বেক্সিমকো ফার্মা জানিয়েছে, নাজমুল হাসান কোম্পানিটির এমডির পাশাপাশি পরিচালনা পর্ষদেরও সদস্য ছিলেন।
সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সরকারের কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী পদে নিযুক্ত বা কর্মরত ব্যক্তি কোনো লাভজনক পদ কিংবা বেতনাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হইবেন না কিংবা মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যযুক্ত কোনো কোম্পানি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় বা পরিচালনায় কোনোরূপ অংশগ্রহণ করিবেন না।’
মন্ত্রী ছাড়াও রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, নির্বাচন কমিশনার ও সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্যের বেলায়ও সংবিধানের এ ধারা প্রযোজ্য।
জানা গেছে, নাজমুল হাসান ১৯৮৭ সালে বেক্সিমকো প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দিয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর পাপনকে নবগঠিত মন্ত্রিসভায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়। মন্ত্রী পদে থাকলে অন্য কোনো পদে কর্মরত থাকা যায় না।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সন্তান ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে নাজমুল হাসান পাপনকে চেনেন সবাই। এই দুই পরিচয়ের কারণে অনেকটাই ঢাকা পড়ে গেছে দেশের ওষুধ শিল্পে তার অবদানের কথা।
পাপন জনপ্রশাসনে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপণন কৌশল ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেন। আইবিএর সাবেক ছাত্রদের সংগঠন আইবিএ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং আইবিএ ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বেও আছেন পাপন।
ব্যবসায়িক অঙ্গনে পাপন সুপরিচিত তার ব্যবসায়িক দক্ষতা ও কৌশলগত চিন্তার সুবাদে। ২০১৩ সালে দুবাইতে এশিয়ান ব্র্যান্ড সামিটে পাপনকে এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নেতার পুরস্কার দেওয়া হয়। পাপন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তার আগে তিনি একই সংগঠনের টানা চারবারের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ নীতি ও মেধাস্বত্ব বাণিজ্যিক চুক্তি সংক্রান্ত অনেকগুলো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। যুক্তরাজ্যে কমনওয়েলথ সচিবালয়ের ওষুধ ও মেধাস্বত্ব বিষয়ে একজন উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন পাপন।
বাংলাদেশের ওষুধ উৎপাদন শিল্পের বিকাশে পাপনের অবদান অনেক। রপ্তানিতে প্রণোদনা আগে শুধু তৈরি পোশাক শিল্পই পেত। পাপনের তৎপরতায় ওষুধ শিল্পও রপ্তানিতে প্রণোদনা পাচ্ছে। কাঁচামাল আমদানিতে নির্ভরতা কমিয়ে অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রেডিয়েন্টস তৈরির জন্য মুন্সীগঞ্জে এপিআই পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এভাবে ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পে অনেক ভাবেই অবদান রেখেছেন পাপন।
বিসিবি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ভূমিকা এবং ক্রীড়াঙ্গনের অন্যান্য সংগঠনের প্রতি উদার মানসিকতার সাক্ষী দেশের ক্রীড়াজগত। ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ হিসেবে ক্রীড়ামন্ত্রী হয়েছেন পাপন, এটা দেশের জন্য ইতিবাচক বলেও মনে করেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সংশ্লিষ্টরা।