নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে পাঁচ বছরের নিচের প্রায় ২৫ কোটি শিশু দরিদ্রতা, পুষ্টিহীনতা এবং অপর্যাপ্ত প্যারেন্টিং দক্ষতার কারণে তাদের সম্পূর্ণ বিকাশের সম্ভাবনা অর্জনে ব্যর্থ হয়। শিশুদের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি, প্রাথমিক শৈশব উদ্দীপনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে আইসিডিডিআরবি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ কর্মসূচি’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির এমসিএইচডি বিভাগের এমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. জেনা দেরাখশানি হামাদানি। তিনি তার বিস্তৃত গবেষণা দেখিয়েছেন খেলাধুলা ভিত্তিক শিশু লালন-পালন কর্মসূচি শিশুদের জ্ঞানগত, ভাষাগত, শারীরিক এবং আচরণগত বিকাশকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করে।
ড. হামাদানি বলেন, শিশুর বিকাশকে উন্নত করতে, পরিবারের সবাইকে, বিশেষত বাবাদের, সক্রিয় ভূমিকা পালন করা জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে শিশুর প্রয়োজনগুলির প্রতি মনোযোগী হওয়া, ভাষা দক্ষতা বাড়ানোরজন্য কথোপকথনে যুক্ত হওয়া, এবং খেলার মাধ্যমে শেখার জন্য বয়স উপযোগী খেলনা প্রদান করা। এমন যৌথ প্রচেষ্টা শিশুর বৃদ্ধি এবং সুস্থতা নিশ্চিত করতে একটি সমর্থনশীল পরিবেশ তৈরি করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর আওতায় প্রাথমিক শৈশব বিকাশকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, বিশেষ করে এসডিজি ৪ দশমিক ২ এর লক্ষ্য হচ্ছে সব মেয়ে এবং ছেলে শিশুদের মানসম্পন্ন প্রাথমিক শৈশব বিকাশ, এবং প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ প্রদান করা যাতে তারা প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিশুদের সম্পূর্ণ বিকাশের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির উদ্দেশ্যে কয়েক দশকের গবেষণা উপস্থাপন করা হয়েছে। আইসিডিডিআরবির মূল্যায়নে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারী মায়েরা শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে উন্নত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেছেন, যা প্রতিভাবান শিশুদের বিকাশ এবং একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে পারে । কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক শৈশব বিকাশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে যাতে অভিভাবকদের শিশুদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানো যায় এবং সামগ্রিক শিশুর বিকাশ সম্পর্কে প্রচার করা যায়। আর এই কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে চারটি জেলার (নরসিংদি, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষীপুর) ২১টি উপজেলার ৬১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৪৮৫ জন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রাথমিক শৈশব বিকাশ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যারা পরে ১,৮২১ জন সম্মুখসারির স্বাস্থ্য কর্মীদের এই সেবা প্রদানে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আর এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৬-৩৬ মাস বয়সী শিশুদের ১৪ হাজারের বেশি মা বা যত্নদাতাদের প্রশিক্ষিত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে স্মার্ট শিশু গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ একটি প্রতিশ্রুতি যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করার পরিকল্পনা। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের গড়ে তুলতে হবে স্মার্ট শিশু। যাদের জ্ঞান, বুদ্ধি এবং উদ্ভাবনী দক্ষতা আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে ‘ভিশন ২০৪১’ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবে।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন,আইসিডিডিআরবি আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সংক্রান্ত এমন একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান যা দেশের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, গবেষণা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত হয়ে আইসিডিডিআরবি গবেষণা, প্রশিক্ষণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অভিজ্ঞতা বিনিময় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার, আইসিডিডিআরবির চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট ইউনিট এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সাথে একত্রিত হয়ে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, শিশুদের বিকাশ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরো সুন্দর করে আমরা যদি তাদেরকে যথাযথভাবে গড়ে তুলতে পারি তাহলে আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। আমরা এগিয়ে যাবো।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এবং আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ প্রমুখ।