নিউজ ডেস্ক।।
মানুষকে বয়সের আগেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় সিগারেট। অথচ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই কথাটি সিগারেটের প্যাকেটেই লেখা থাকে। তবুও মানুষ ধূমপান করে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বিশ্বজুড়ে বহু মানুষের মৃত্যু ও বিভিন্ন রোগের কারণ হলো তামাক। সিগারেট মানুষকে বয়সের আগেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তামাক গ্রহণের ফলে ক্যানসার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের সমস্যা, স্ট্রোক, বন্ধ্যাত্ব, অন্ধত্ব, টিবি, ওরাল ক্যাভিটির মতো রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়াও তামাকে অ্যাসিটোন, টার, নিকোটিন, কার্বন-মনোক্সাইড এর মতো ক্ষতিকর পদার্থ থাকে। যা মানুষের ফুসফুস এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধূমপান ছাড়ার প্রবণতা বেড়েছে। গত দু-তিন বছরে আরও গতিশীল হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সূত্র : সিবিসি
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে ডব্লিউএইচও জানায়, ২০২২ সালে বিশ্বে গড়ে প্রতি ৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীদের মধ্যে একজন এই বদঅভ্যাস ত্যাগ করেছেন। এর আগে অধিক হারে ধূমপান ছাড়ার চিত্র দেখা গেছে ২০০০ সালে। সে বছর গড়ে প্রতি ৩ জন প্রাপ্তবয়স্কদের একজন ধূমপান ছাড়েন।
বর্তমানে যে হারে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্তত ১৫০টি দেশ ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
মৃত্যু এখনই কমছে না :
বিশ্বে ধূমপায়ীদের সংখ্যা কমলেও ধূমপানজনিত মৃত্যুর সংখ্যায় শিগগির কমছে না।তামাকজনিত মৃত্যুর হারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের জন্য আরও সময় লাগবে বলে মনে করছে ডব্লিউএইচও।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ধূমপান নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে যেসব দেশ দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসব দেশকে তামাকজনিত মৃত্যুর হার হ্রাসের জন্য আরও কমপক্ষে ৩০ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ধূমপান ও তামাকজনিত কারণে বছরে আশি লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ পরোক্ষ ধূমপায়ী। এরা নিজেরা ধূমপান করেন না, কিন্তু ধূমপায়ীদের আশেপাশে থাকায় বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগে মারা যান।
তবে বর্তমানে যে গতিতে ধূমপায়ীদের সংখ্যা কমছে, তা আশাব্যাঞ্জক হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ধীর। ২০১০ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ধূমপান ও তামাকজনিত কারণে মৃত্যুহার ৩০ শতাংশ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এই মুহূর্তে বিশ্বের মাত্র ছয়টি দেশ এই লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি রয়েছে। এই দেশগুলো হলো ব্রাজিল, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (ডিআর) কঙ্গো, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, মলদোভা এবং ওমান।
এখনও কাটেনি উদ্বেগ:
প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীদের মধ্যে ধূমপান ত্যাগের প্রবণতা বৃদ্ধি পেলেও সমাজ থেকে এ সংক্রান্ত উদ্বেগ এখনও কাটেনি। কারণ ডব্লিউএইচও’র পর্যবেক্ষণ বলছে, অপ্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সাফল্য এখনও আসেনি।
সংস্থাটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে অন্তত ৩ কোটি ৭০ লাখ অপ্রাপ্তবয়স্ক সিগারেট এবং অন্যান্য তামাকজাত পণ্যে অভ্যস্ত। এই অপ্রাপ্তবয়স্কদের সবাই ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী। বর্তমানে বিশ্বে যত ধূমপায়ী রয়েছেন, তাদের মধ্যে এই কিশোর-কিশোরীদের হার অন্তত ১০ শতাংশ।
তবে ধূমপায়ী কিশোর-কিশোরীদের প্রকৃত সংখ্যা পরিসংখ্যানের চেয়ে আরও অনেক বেশি বলে মনে করে ডব্লিউএইচও। কারণ, অন্তত ৭০টি সদস্যরাষ্ট্র এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দেয়নি।
ডব্লিউএইচও’র হেলথ প্রমোশন বিভাগের পরিচালক রুয়েডিগের ক্রেচ মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিসিকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপের জন্য আমরা বহুদিন ধরে প্রচারাভিযান চালাচ্ছি; কিন্তু অনেক দেশ এই ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাছাড়া সিগারেট ও তামাক কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য বিক্রি করতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। এই মুহূর্তে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য থেকে মুক্ত রাখাই বড় একটি চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করেন তিনি।