নিউজ ডেস্ক।।
আমরা সবাই জানি- মশার কামড় থেকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ নানা রোগ হতে পারে। তবে মশার কামড় খায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মশার কামড় কিছু মানুষকে তুলনায় বেশি কামড়ায়। কিন্তু কেন তাদেরকে কম কামড়ায়। গবেষনায় দেখা গেছে, কিছু কিছু মানুষের চামড়ায় এমন কিছু উপাদান থাকে যা মশাকে আকৃষ্ট করে। তাই যাদের মশা বেশি কামড়ায়, তাদের সারা জীবনই মশার কামড় খেয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশে মূলত ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, চিকুনগুনিয়া এবং জাপানিজ এনসেফালাইটিস এই ৫ টি মশাবাহিত রোগ ছড়ায়। এমনকি অনেকের মৃত্যুও হতে পারে। এবার বাংলাদেশে মশা বাহিত চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ৬’শ ৯৯ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ২০ হাজার ৮৩৫ জন।
তাই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচতে মশার কামড় থেকে বাাঁচা প্রয়োজন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ঘরে মধ্যে বসে আছেন অনেকেই। তার মধ্যে দু-একজনকেই ছেঁকে ধরেছে মশা। কেন এমন হয় জানেন?
সাম্প্রতিক এক গবেষণা নির্দেশ করছে সেই দিকেই। নিউ ইয়র্কের রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুজীববিদ্যার গবেষক লেসলি ভসহলের নেতৃত্বে হওয়া গবেষণাটি বলছে, কিছু কিছু মানুষের চামড়ায় এমন কিছু উপাদান থাকে যা মশাকে আকৃষ্ট করে। সারা জীবনই সেই উপাদানগুলি ত্বকে পাওয়া যায়। তাই চির কালই তাঁদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় মশা।
মঙ্গলবার বিজ্ঞান পত্রিকা ‘সেল’-এ প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি। চৌষট্টি জন স্বেচ্ছাসেবকের উপর করা হয়েছে পরীক্ষাটি। গবেষকরা বলছেন, বিভিন্ন রকম ভাবে স্বেচ্ছাসেবকদের সাজিয়ে এডিস ইজিপ্টাই মশার সামনে নিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। দেখা গিয়েছে, বিশেষ কয়েক জন ব্যক্তির দিকে প্রায় একশো গুণ বেশি আকৃষ্ট হয়েছে মশা। বেশ কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা করার পরেও একই রয়ে গিয়েছে ফলাফল। এই ব্যক্তিদের গবেষকেরা নাম দিয়েছেন ‘মশক চুম্বক’ বলে। কিন্তু কেন ঘটে এমনটা? গবেষকদের দাবি, যাঁদের মশা বেশি কামড়াচ্ছে তাঁদের ত্বকে কিছু বিশেষ ধরনের অ্যাসিড ক্ষরিত হয়। ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে এই অ্যাসিডগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ত্বক ভেদে বিভিন্ন মানুষের দেহে বিভিন্ন হারে এই উপাদানগুলি ক্ষরিত হয়। ত্বকে বসবাসকারী কিছু ব্যাক্টেরিয়া এই অ্যাসিড থেকে উৎপাদিত ‘পিচ্ছিল’ কণাগুলির উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। মানুষের গায়ের গন্ধও কিছুটা এই উপাদানের উপর নির্ভর করে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই উপাদানের প্রতিই আকৃষ্ট হয় মশা। যে হেতু এই অ্যাসিডগুলি ত্বকের স্বাভাবিক উপাদান, তাই জোর করে এই উপাদানগুলি দেহ থেকে দূর করতে গেলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। ফলে মশার কামড় থেকে বাঁচার উপায় নেই।
এর আগে এক গবেষণায় জানা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রুপের রক্ত বিশেষ করে পছন্দ মশাদের। এডিস মশাদের পছন্দ ‘ও’ ব্লাড গ্রুপের রক্ত। কিন্তু অ্যানোফিলিসদের পছন্দ ‘এবি’ গ্রুপের রক্ত। মশারা বহুদূর থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডের হদিশ পায়। চেহারায় যারা দেখতে বড় তাদের শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবেই তুলনায় বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড বেশি বেরোয় অন্যদের থেকে। তাই এদের মশা বেশি কামড়ায়। মুখ ও নাক থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয় বলেই মাথার উপর মশার ঝাঁক ঘুরতে দেখা যায়। মশারা নানা রকমের গন্ধ পায়। ঘাম থেকে নির্গত অ্যামোনিয়া, ল্যাকটিক অ্যাসিড, এর গন্ধ পায় এরা। অতিরিক্ত পরিশ্রমে যেন শরীর গরম হয় এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈকি হয়। ঘামের গন্ধের উপরেও নির্ভর করে, কাকে মশা বেশি কামড়াবে। যারা ঘামে বেশি তাদের বহু দূর থেকেই সহজে হদিশ পায় মশারা। গর্ভবতী মহিলাদেরও মশা বেশি কামড়ায়।
২০০০ সালে আফ্রিকায় হওয়া একটি গবেষণা বলছে, গর্ভবতী মহিলাদের দ্বিগুণ পরিমাণে মশা কামড়ায়। কারণ এদের শরীর তুলনামূলক বেশি গরম থাকে। মশারা কি বিয়ার-এর স্বাদ পছন্দ করে? গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা জল খেয়েছে তাদের থেকে বেশি যারা বিয়ার খেয়েছে, তারাই মশাকে বেশি আকর্ষণ করে। একজনের ত্বকে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া আছে তার উপরেও মশার কামড় নির্ভর করে। যেখানে ব্য়াকটেরিয়া বেশি সেখানে মশারা আকৃষ্ট হয় বেশি। সেই কারণেই পায়ে এবং গোড়ালিতে সবচেয়ে বেশি মশারা কামড়ায়।পোশাকের উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে। যেমন দেখা গিয়েছে কালো বা অন্যান্য গাঢ় রঙের পোশাক যারা পরে তাদেরকেই আগে ঝেঁকে ধরে মশারা।