নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ঢাকার ধানমন্ডিতে অবস্থিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল ভবনে দেশের প্রথম প্রিভেন্টিভ অনকোলজি (ক্যান্সার প্রতিরোধ) বিভাগের উদ্বোধন হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র চ্যারিটেবল ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা প্রিভেন্টিভ অনকোলজি বিভাগের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যান্সার হাসপাতালের প্রকল্প সমন্বয়কারী ও প্রধান এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন মূল বক্তব্য রাখেন ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জাতীয ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাই, বারডেমের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা.শুভাগত চৌধুরী, নারীস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ড. হালিদা হানুম আখতার, নারী অধিকার নেত্রী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি শিরীন হক, বিএসএমএমইউর গাইনি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক লতিফা শামসুদ্দিন, বিএসএমএমইউর ইউরো-অনকোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ সালাম, বিএসএমএমইউর প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেজাম উদ্দিন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আফতাব উদ্দিন, ডা. আবু জামিল ফয়সাল, ডা. মো. শহিদুল্লাহ, নিপসমের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আব্দুল হাকিম মজুমদার, হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডর কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন, নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন কর্মী শওকত মাহমুদ, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক মসিহ্উদ্দিন শাকের, নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মাশহুদা খাতুন শেফালী। হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক বদরুল হক, ডা. ফারজানা আক্তার ও ডা. নিজামুল হক।
অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান বিপুল সংখ্যক ক্যান্সার রোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিরোধ, নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রশমন সেবার বিদ্যমান সুবিধা অপ্রতুল। স্বাস্থ্যবীমার আওতায় রোগীর আর্থিক সামর্থ্য অন্যুায়ী সেবার ব্যয়, সারাদেশে সমাজভিত্তিক প্রাথমিক সেবা প্রদান ও প্রতিরোধের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তিন ধাপে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার সেবা ও গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গণমানুষের আস্থার প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যান্সার হাসপাতালের প্রকল্প সমন্বয়কারী ও প্রিভেন্টিভ অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, দেশে বেশ কিছু ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র চালু হলেও কোথাও প্রিভেন্টিভ অনকোলজি বিভাগ নেই। অথচ সারা বিশ্বে এই বিভাগ ছাড়া কোন স্বীকৃত ক্যানসার সেন্টার কল্পনা করা যায় না। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জন্মলগ্ন থেকেই রোগ প্রতিরোধের প্রতি অধিকতর জোর দিয়ে এসেছে।
তিনি জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল ও সমাজভিত্তিক সচেতনতা কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্যান্সার স্ক্রিনিং-এর বিস্তৃত সেবা প্রদান করবে এই বিভাগ। প্রথম পর্যায়ে স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার চালু হচ্ছে। ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট একজামিনেশন, ভায়া ও মুখগহ্বর পরীক্ষার সাথে অন্যান্য অসাংক্রমক রোগের স্ক্রিনিং-এর জন্য ওজন, উচ্চতা, রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার পরিমাপ করে দেয়া হবে বিনামূল্যে। তবে স্বচ্ছল ব্যক্তিগণ আর্থিক সামর্থ্য অন্যুায়ী ফি প্রদান করবেন। স্বল্প খরচে এফএনএসি, সাইটোলজি, কোর বায়োপসি, প্যাপটেস্ট ও এইচপিভি ডিএনএ টেস্ট করা যাবে। সর্বনিম্ন ধাপে মাত্র দুই হাজার টাকায় স্যাম্পল কালেকশনসহ এইচপিভি ডিএনএ টেস্ট করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালেন প্যাথলজি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগিতায়।
কর্মবীর যোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অসমাপ্ত এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এই ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ।
অনুষ্ঠানে আয়োজকরা তিনটি ধাপে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। ২০২৫ সালের মধ্যে ইনডোর, ডে-কেয়ার ও ওটি চালু করা হবে। একটি লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন বসানোর সম্ভব্যতা যাচাই করা হবে। জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কৌশলপত্র, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচী প্রণয়ণের বিষয়ে এডভোকেসি ও জনমত গঠনের জন্য কাজ করবে এই বিভাগ। হাসপাতাল ও জনগোষ্ঠীভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন চালু করা হবে।
প্রথম ধাপে নগর হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার বিদ্যমান সুবিধা (৭ম তলায় ব্র্যাকিথেরাপি ও কেমোথেরাপির ডে-কেয়ার সেন্টার, বিদ্যমান জনবল) আত্তীকরণ করে এর সাথে ৬ষ্ঠ তলায় ক্যান্সার ওপিডি ও ক্যান্সার প্রতিরোধ বিভাগ যুক্ত করে ক্যান্সার হাসপাতালের ইউনিট-১ গড়ে উঠবে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে। ভর্তি রোগীর চিকিৎসা হবে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের আওতায়। ২০২৪ সালের মধ্যে এই ইউনিট ও নগর হাসপাতালের সমন্বয়ে কেবলমাত্র বিকিরণ চিকিৎসার টেলিথেরাপি (লিনিয়ার এক্সিলারেটর) ব্যাতিরেকে ক্যান্সারের সকল সেবা চালু হবে। ইউনিট -২ চালু হবে মিরপুর পল্লবীতে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনের ৪/৫ টি ফ্লোর নিয়ে। ২০২৪ সালের মধ্যে এখানে ওপিডি, ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও দূর-দূরান্তের ক্যান্সার রোগীদের স্বল্প খরচে থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ গণস্বাস্থ্য ক্যান্সার নিবাস চালু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ইনডোর, ডে-কেয়ার ও ওটি চালু করা হবে। একটি লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন বসানোর সম্ভব্যতা যাচাই করা হবে।
তৃতীয় ও শেষ ধাপে ২০২৭ সালের মধ্যে সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে/অধিগ্রহণকৃত স্থানে ৪/৫টি রেডিওথেরাপি মেশিন, ওটি কমপ্লেক্স, কেমোথেরাপির জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার সুবিধাসহ পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। দূর-দূরান্তের রোগীদের স্বল্প খরচে থাকা-খাওয়ার জন্য ডরমিটরি থাকবে। আর গণস্বাস্থ্যের সকল স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে টেলিমেডিসিননির্ভর সমাজভিত্তিক প্রাথমিক ক্যান্সার সেবা চালু করা হবে। জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কৌশলপত্র, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচী প্রণয়ণের বিষয়ে এডভোকেসি ও জনমত গঠনের জন্য কাজ করবে এই বিভাগ। হাসপাতাল ও জনগোষ্ঠীভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন চালু করা হবে।
আয়োজকরা আরও জানান, দেশের প্রথম গাইনি অনকোলজিস্ট অকাল প্রয়াত ডা. খুরশিদ জাহান মাওলার পরিবার জরায়ুমুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিং কক্ষ যন্ত্রপাতিসহ সজ্জিত করে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে একজন রোটারিয়ান সহকর্মী আশেক উল ইসলামের পরিবার ক্যান্সার প্রতিরোধ বিভাগের জন্য প্রায় দশ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করে দিয়েছেন।