নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বর্তমানে দেশে প্রায় ৪ লাখের মতো যক্ষ্মা রোগী আছে। তাদের মধ্য থেকে প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজারের মতো রোগীর মৃত্যু হয়। এছাড়া গত তিন বছরে দেশে নতুন করে আরও প্রায় ১ লাখ যক্ষ্মা রোগী বেড়েছে। আর এখনো ১৮ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসার আওতা বাড়াতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কারণ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে আরও বেশি জনগোষ্ঠীর কাছে সময়মতো ও কার্যকর যক্ষ্মা চিকিৎসা পৌঁছানোর সুযোগ আছে। এমনকি পাবলিক-প্রাইভেট মিক্স (পিপিএম) কৌশলের মাধ্যমে উন্নত যক্ষ্মা সেবাও সবার জন্য দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আইসিডিডিআর,বির সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘স্ট্রেন্দেনিং টিউবারকিউলোসিস পাবলিক-প্রাইভেট মিক্স ফর অ্যানহ্যান্সড পলিসি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট’ বিষয়ক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক।
তাহমিদ আহমেদ বলেন, সারা দেশে ৪ লাখের মতো যক্ষ্মা রোগী আছে, যাদের মধ্যে আবার ১০ হাজারের মতো রোগী আছে যাদের ড্রাগ র্যাজিস্টেন্স। তাদের দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে ২০২২ সালে ৬৯ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হলেও আরও প্রায় ৩১ শতাংশ রোগীই শনাক্তের বাইরে থেকে যায়, যা অন্য সাধারণ মানুষের জন্য খুবই আশঙ্কাজনক বিষয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জেলখানাগুলোতে অনেক লোক, সেখানে জায়গার সংকুলান কম। এসব জায়গায় যক্ষ্মার ট্রান্সমিশন খুবই সহজ। আইসিডিডিআর,বি জেলখানায় কাজ করছে। সহজভাবে তাদের কীভাবে চিকিৎসার আওতায় আনা যায়, সেই লক্ষ্যে আইসিডিডিআর,বি কাজ করছে। আমরা মনে করি এ ধরনের কাজগুলোতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে ড. তাহমিদ আহমেদ বাংলাদেশে যক্ষ্মা গবেষণায় আইসিডিডিআর,বির ভূমিকা ও যক্ষ্মা বিষয়ক জাতীয় নীতি ও নির্দেশিকা তৈরিতে ও বাস্তবায়নে আইসিডিডিআর,বির অবদানের কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু। তিনি বলেন, ‘যক্ষ্মা রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। এই সামাজিক আন্দোলনে সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবার সম্মিলিত ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইসিডিডিআর,বি-র সহযোগিতায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্যদের উদ্যোগে এরইমধ্যেই ‘সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস’ গঠন করা হয়েছে। এই সংসদীয় প্ল্যাটফর্মটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যক্ষ্মা প্রতিরোধে প্রাসঙ্গিক লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি বিশ্বাস করি, সবার ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা যক্ষ্মাকে পরাজিত করবো।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে বেসরকারি খাতের উদ্যোগের সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, আমি সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে কাজ করা উচিত। কিন্তু এখনো কেন এটি সম্ভব হচ্ছে না তা বুঝা উচিৎ। যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যে কাজ করলেও এখনো ৩০ ভাগের বেশি রোগীদের আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। তবে আমাদের শনাক্তকরণ রোগীদের ক্ষেত্রে ৯৮ শতাংশ নিরাময় হচ্ছে। এই অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধু লাভের কথা চিন্তা না করে এগিয়ে আসা উচিত।
অনুষ্ঠানে বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে নিয়মিত ডেঙ্গু রোগীর তথ্য না দিলে পরীক্ষার অনুমোদন বাতিল করা হবে বলেও জানান অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে ঠিকমতো তথ্য আমাদের কাছে পৌঁছে না। কোভিডের সময় অনেকে কোভিড টেস্টের রিপোর্ট আমাদের দেননি, ডেঙ্গুতেও এমনটা হচ্ছে। কিন্তু এমন হতে থাকলে আমরা পরীক্ষা অনুমোদন বাতিল করে দিব।
অনুষ্ঠানে ‘জার্নি টু কিউর’ নামের একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনার মাধ্যমে যক্ষ্মা মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সহযোগিতা নিয়ে আলোকপাত করা হয়। সেখানে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রমের ওপর বেসরকারি খাতের নানা প্রচেষ্টাও তুলে ধরা হয়। এছাড়া ‘বাংলাদেশে পাবলিক-প্রাইভেট মিক্স পলিসি অ্যাডভোকেসি’ বিষয়ে একটি উপস্থাপনায় বিভিন্ন নীতি ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করেন অতিথিরা।