নিজস্ব প্রতিবেদক।।
রাজধানীর ঢাকা ডেন্টাল কলেজের এক ছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তার সহপাঠীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঘটনা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজ প্রশাসন। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা ডেন্টালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল আজ শনিবার (১ জুন) সন্ধ্যায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে সকালে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় কমিটি গঠন করা হয়। কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. মোখলেছুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে ছাত্র হোস্টেল এবং ছাত্রী হোস্টেলের দুজন করে চার সুপারকে সদস্য করা হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাতে কলেজের ছাত্র হোস্টেলের নিজ কক্ষে নির্যাতনের শিকার হন ৫৯তম ব্যাচের ওই শিক্ষার্থী। তার বাড়ি খুলনায়। অপরদিকে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থী তারই সহপাঠী। এর মধ্যে তিনজন তার রুমমেট। তারা হলেন আকিব, জিম, হাসান, অমিত ও শাওন।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ‘বৃহস্পতিবার রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়লে সাড়ে ১১টার দিকে কয়েকজন এসে আমাকে উঠায়। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তারা মারধর শুরু করে। ঘুম থেকে উঠিয়ে চেয়ার দিয়ে আমাকে প্রচুর আঘাত করেছে। তারপর একটা কাগজ এনে ওইটা পড়তে বলেছে। আমি পড়িনি, তাই কাগজটা আমার মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। আমার দাঁতে ব্রেস পরানোর কারণে সেটা বের করতে গিয়ে আমার হাত কেটে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারা আমাকে অনেক কিল-ঘুসি দিয়েছে। আমি ওদের কাছে একটু পানি চাইলেও তারা দেয়নি। পাশের বোতল নিয়ে মুখে দিলে নিচে পানি পড়ে যায়। এরপর তারা মশারি ছিঁড়ে, শার্ট এনে জোর করে নিচে ফেলে দিয়ে আমাকে দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে নিয়েছে। আমি পরিষ্কার করতে চাইছিলাম না, তাই খাটের ওপর নিয়ে ইচ্ছামত কিল-ঘুসি দেওয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে তারা আমার প্যান্ট খোলার চেষ্টা করে। রুম পরিষ্কার করার ঝাড়ু পায়ুপথে প্রবেশ করার চেষ্টাও করেছে তারা।’
মারধরের পর অভিযুক্তরাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় বলে জানান তিনি। বলেন, ‘তখন আমার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেছিল। তারা প্রথমে কোলে করে নিয়ে আমাদের কলেজের এমার্জেন্সিতে নিয়ে গেছে। ওষুধও দিয়েছিল, কিন্তু অবস্থা আরো খারাপ পর্যায়ে গেলে ডাক্তারদের বলেছে যে আমার বুকে ব্যথা। এজন্য হার্ট ফাউন্ডেশনে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হার্টে আমার কোনো সমস্যা নাই। ওরা আমার বুকে লাথি মারার কারণে ব্যথা করছিল, তাই চাপ দিয়ে রেখেছিলাম। আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। পরে আমাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের এমার্জেন্সিতেও নেওয়া হয়েছে। আমাকে অপ্রয়োজনে অক্সিজেন দেওয়ায় আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
মারধরের কারণ হিসেবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে ঈর্ষাকাতর হয়ে তারা মারধর করেছে। এমনকি তারা আমাকে শর্ত দিয়েছিল যে বাবা-মাসহ কারো সাথেই কথা বলা যাবে না। ঘুম থেকে দ্রুত ওঠা যাবে না। এমনকি নামাজও পড়া যাবে না। অর্থাৎ তারা যা বলবে আমাকে তাই মানতে হবে। আমি অনেক এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি করতাম। এজন্য তারা আমার প্রতি ঈর্ষাকাতর ছিল।’
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে একটি সূত্র বলছে, সম্প্রতি একই ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মারধরের শিকার ওই ছাত্র। কিন্তু ওই ছাত্রীর আগেও একটি সম্পর্ক ছিল তার এলাকায়। এ ঘটনায় আগের বয়ফ্রেন্ড বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীসহ তার বন্ধুদের হুমকি-ধামকি প্রদান করে আসছিল। বিভিন্ন সময় কলেজে এসেও তাদের হয়রানি করে। এসব ঘটনার রেশ ধরেই তার সহপাঠীরা বাদানুবাদে জড়ায়। এর প্রেক্ষিতে এই মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর চিকিৎসার অবস্থা দেখে এসেছি। আমরা এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। কিন্তু আমরা তো প্রশাসন, তার লিখিত অভিযোগের জন্য আমরা অপেক্ষা করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সকল বিষয় খতিয়ে দেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি পাঁচ সদস্যের একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আজকে জরুরি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে।