ঢাকায় ৩ শতাংশ শিশু অটিজম আক্রান্ত

২০১৩ সালের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ঢাকা শহরে ৩ শতাংশ শিশু অটিজম আক্রান্ত। গ্রামে প্রতি সাত শ জনে একজন শিশু অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। সে হিসাবে গ্রামের তুলনায় শহরে অটিজম আক্রান্ত শিশুর হার ২১ গুণ বেশি। 

by vendettamoon9@gmail.com
Autism

স্টাফ রিপোর্টার।।

দেশে ঠিক কতজন শিশু অটিজম আক্রান্ত সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ২০০৯ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, দেশে এক শতাংশ শিশু অটিজম আক্রান্ত। ২০১৩ সালের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ঢাকা শহরে ৩ শতাংশ শিশু অটিজম আক্রান্ত। গ্রামে প্রতি সাত শ জনে একজন শিশু অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। সে হিসাবে গ্রামের তুলনায় শহরে অটিজম আক্রান্ত শিশুর হার ২১ গুণ বেশি।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ১৭তম ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সচেতনতা-স্বীকৃতি-মূল্যায়ন: শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা’। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপ অনুসারে, চলতি বছরের ১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে অটিজম শিশুর সংখ্যা প্রায় ৮৬ হাজার ১৪২ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৫২ হাজার ৮৩৮ জন ও নারী ৩৩ হাজার ২৫০ জন। এ ছাড়া, হিজড়া সম্প্রদায়ের রয়েছে ৫৪ জন। অর্থাৎ, অটিজম শনাক্তদের ৬১ দশমিক ৩৩ শতাংশই পুরুষ।

অটিজম হচ্ছে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা। এতে আক্রান্ত শিশুর মাঝে সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক আচরণ ও সামাজিক কল্পনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। অটিজম কেন হয়, তার কারণ খুঁজতে সারাবিশ্বে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। তবে এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো পাওয়া যায়নি।

দেশে ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম ও স্নায়বিক জটিলতা-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করছেন প্রধানমন্ত্রীকন্যা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ ড. সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল। তার উদ্যোগে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজম-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যার সদরদপ্তর করা হয় বাংলাদেশে। তার চেষ্টাতেই বাংলাদেশে ‘নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট-২০১৩’ পাস করা হয়।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, গড়ে প্রতি ১২৫ জন শিশুর মধ্যে ১ জন অটিজমের উপসর্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অটিজমের নির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। একজন মানুষের মাঝে অটিজমের বৈশিষ্ট্য থাকবে কি না তা জিনের মধ্যে নির্ধারণ করা থাকে। পরিবেশ যদি তার প্রতিকূলে থাকে সেটার জন্যও অটিজম দেখা দিতে পারে। কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশু কিংবা গর্ভাবস্থায় যে মায়েদের পুষ্টিহীনতা থাকে সেই গর্ভের শিশুদের অটিজমের ঝুঁকি বেশি থাকে।

অটিজম আক্রান্ত শিশুর দেড় বছর বয়স থেকে কিছু লক্ষণ দেখা যায় বলে জানান ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু। তিনি বলেন, তিন বছর বয়সে এসে শিশুর মধ্যে পুরো লক্ষণ প্রকাশ পায়। এসব শিশু অন্য শিশুদের সঙ্গে মিশতে চায় না, একা থাকতে পছন্দ করে, একা একা নির্দিষ্ট কিছু জিনিস নিয়ে খেলতে পছন্দ করে।

স্বাভাবিক শিশুরা যে ধরনের খেলাধুলা করে, অটিজম আক্রান্তরা সে ধরনের খেলাধুলা করে না। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা বোতল, ব্রাশ কিংবা কাগজের টুকরো নিয়ে খেলাধুলা করে। এ ধরনের শিশুদের নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় কম, চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। তারা বেশি রাতে ঘুমাতে চায়। এদের হজমের অসুবিধা থাকে। কখনো কখনো তারা অধিক পরিমাণে হাইপার থাকে বলেও জানান এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

শিশুর অটিজম আছে কি না, সেটা জানতে করণীয় প্রসঙ্গে ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু বলেন, নির্দিষ্ট বয়সে শিশুর নির্দিষ্ট বিকাশ হচ্ছে কি না, সেটি বাবা-মায়ের গুরুত্বসহ খেয়াল রাখা জরুরি। যেমন- এক বছরের একটি শিশু কতটুকু কথা বলার কথা, দুই বছরের শিশু কতটুকু, এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ধাপে ধাপে শিশুর যে বিকাশ হওয়ার কথা সেটা হচ্ছে কি না; সেটা জানতে শিশু বিশেষজ্ঞ বা হাসপাতালে মাঝে মাঝে শিশুর পরীক্ষা করাতে হবে।

অটিজমের চিকিৎসা সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অটিজম সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব নয়, এটি জেনেটিক। আবার আমাদের দেশে রোগীর তুলনায় চিকিৎসাসেবাও অপ্রতুল। তাই, প্রথমে রোগটি নির্ণয় করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ ধরনের রোগীদের মধ্যে অতিরিক্ত চঞ্চলতা থাকে। এরা নিয়মিত খায় না, হজমের অসুবিধে থাকে। এ ধরনের রোগীর চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকই যথেষ্ট। তবে এ রোগগুলোর কিছু ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য একজন সাইকোলজিস্ট ও একজন স্পিচ থেরাপিস্টের প্রয়োজন হয়।

 

আরও পড়ুন: চুনারুঘাটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবায় ভোগান্তি

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com