বগুড়া প্রতিনিধি।।
ভুয়া চিকিৎসকের মাধ্যমে শিশুর খতনা করাতে গিয়ে ঘুমের বড়ি দিয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টার কারণে প্রাণ যেতে বসেছে এক শিশুর। ভুয়া চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণে ওমর ফারুক (১৫ মাস) নামের ওই শিশু গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
সোমবার (২৪ জুন) দুপুর ১২টার দিকে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী গ্রামে শিশুটির নানা তোজাম্মেল হোসেনের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে গত।
শিশুর পিতা আব্দুল মোমিন জানান, তার শিশুপুত্র ওমর ফারুকের লিঙ্গে ইনফেকশন দেখা দিলে চিকিৎসক তাকে মুসলমানি করে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে তিনি রেজিস্ট্রার কোনো চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে পার্শ্ববর্তী নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর বাজারে শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি চেম্বার দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন তার কাছে যান। তার চেম্বারে কোনো সাইনবোর্ড না থাকলেও নিজেকে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শহিদুল আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী গ্রামে শিশুটির নানাবাড়িতে যান ওমর ফারুকের মুসলমানি করার উদ্দেশে। এ সময় শিশুটি যেন ব্যথা না পায় তার জন্য অজ্ঞান করতে ঘুমের ওষুধ এবং অ্যাসিডিটির ট্যাবলেট পানি দিয়ে গুলিয়ে শিশুটিকে খাওয়ানো হয়। এরপর একটি ইনজেকশনের সিরিঞ্জে তরল ওষুধ নিয়ে শিশুটির নাভির নিচে প্রয়োগ করেন। ফলে সঙ্গে সঙ্গে শিশুটির খিঁচুনি শুরু হয় এবং মুখ দিয়ে ফেনা উঠতে থাকে আর শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এ সময় শিশুটির পরিবারের সদস্যরা আতংকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে শহিদুল তাদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, শিশুটি ঘুমিয়ে পড়েছে। একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।
তার অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকলে পরিবারের সদস্যরা শিশু ওমরকে আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তার জ্ঞান ফিরে এলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আদনান বলেন, শিশুটিকে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার ফলে জ্ঞান হারানো অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শিশুটির জ্ঞান ফেরার পর তার উন্নত চিকিৎসার জন্য শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ প্রদান করলে, তারা সেখানে নিয়ে যায়।
এদিকে মঙ্গলবার ভোরে শজিমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ৩নং ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, তাকে অক্সিজেন ও স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝে মধ্যে ঘুমিয়ে পরছে আবার জেগে উঠলেই ছটফট করছে।
আব্দুল মোমিন জানান, এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি শহিদুল এ ধরনের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। সেটি জেনেই মনে করেছি- যেহেতু অনেকের বাড়িতে গিয়েই শিশুদের খতনা করে থাকেন, তাই তিনিও তাকে দিয়ে শিশু ওমরের খতনা করতে চেয়েছিলেন। তবে শহিদুল ইসলাম যে ডাক্তার নন সেই বিষয়টা তার জানা ছিল না। এ ঘটনায় শিশুটি সুস্থ হওয়ার পর তিনি শহীদুলের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানান।
মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, শিশু ওমর ফারুকের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছাড়া অপারেশন করার নিয়ম নেই। গ্রামেগঞ্জে ভুয়া ডাক্তার সেজে চিকিৎসা দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানির মধ্যে ফেলছে এসব তথাকথিত ভুয়া চিকিৎসকরা। এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষকে অধিকতর সচেতন এবং এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।
এদিকে শিশু ওমরের খতনা করা শহিদুল ইসলাম জানান, এ ধরনের মুসলমানি তিনি অহরহ করে থাকেন। শিশুটিকে তিনি গ্যাসের ওষুধ দিয়েছিলেন যেন অপারেশনের পর তার অ্যাসিডিটি না হয়। আর লোকাল ইনজেকশন দিয়েছিলেন অবশ করার জন্য। এতে শিশুটি ঘুমিয়ে পড়লে তার পরিবারের লোকজন ভয় পেয়ে যায় এবং হাসপাতালে স্থানান্তর করে। যার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
এ ধরনের অপারেশন করা তার আইনগত অধিকার আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুল ইসলাম ভুল স্বীকার করে বলেন, এ রকম কাজ আর করবেন না বলেও জানান তিনি।