নিজস্ব প্রতিবেদক।।
জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পেতে হলে উন্নত দেশের মত স্বাস্থ্যবীমা চালু করা জরুরি বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্যবীমা থাকলে যেকোন জরুরি অবস্থায় রোগীদের বিনা পয়সা চিকিৎসা করা যাবে। আমি চিকিৎসকদের মধ্যে দিয়ে স্বাস্থ্যবীমা চালু করতে চাই। হাসপাতাল গুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত গরীব ও দুস্থ রোগীদের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ফান্ড থাকা দরকার এবং রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স এর জন্য জরুরি ব্যবস্থা থাকা দরকার।
রোববার ( ১৭ ডিসেম্বর) কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে ‘ফরমুলেটিং প্রোটোকল ফর ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস ফর রোড ক্রাশ ভিক্টিম’ শীর্ষক এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের সযোগীতায় এ কর্মশালার আয়োজন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিভেন্টিভ এন্ড সোস্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন ও পাবলিক হেলথ ইনফরমেটিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক গবেষণা উপস্থাপন করেন।
কর্মশালায় বলা হয়, প্রতিবছর সারা বিশ্বে ১ দশমিক ৩ মিলিন মানুষ সড়ক দুর্ঘনটায় মারা যায় এবং ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় । এদের অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশের মানুষ। বাংলাদেশে যথাযথ জরুরি চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা ও সড়ক দুঘর্টনায় আহত মানুষেদর দুই তৃতীয়াংশ হাসপাতালে নেবার পথেই মারা যায় এবং অধিকাংশ আহত ব্যক্তি প্রাথমিক চিকিৎসা পায় না। দুর্ঘটনায় কবলিত মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানরে জন্য প্রথম ঘণ্টাই অত্যান্ত গুরুত্ব। এই সময় যদি আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা দেয়া যায় তবে আহতের ব্যক্তিদের মৃত্যুহার কমে যাবে এবং তারা দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন।
অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, উন্নত বিশ্বের মত বাংলাদেশেও দুর্ঘটনায় কবলিত মানুষের সেবার জন্য একটি ফান্ড রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে করে জরুরি চিকিৎসা সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলোর আর্থিক সমস্যায় পড়তে না হয়। এজন্য সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সড়ক নির্মাণকারী ঠিকাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফান্ড গঠনে এগিয়ে আসতে হবে। সড়ক নিরাপত্তা আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সাধারণমানুষকে সচেতন করতে হবে। আইনি জটিলতার কারণে দুঘর্টনা কবলিত ব্যক্তিদের উদ্ধার কাজের জন্য সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসতে ভয় পায়।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ পরিবহন শ্রমিদকের চোখের রোগ বিশেষ করে ছানিপড়া, চোখ ঝাপসা দেখা, অতিরিক্ত ও টানা পরিশ্রম করাসহ শারীরিক অসুস্থতা অক্ষমতা। এই পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নিয়মিত শরীর পরীক্ষা করতে। চোখের সমস্যার জন্য প্রতিবছর কমপক্ষে দুবার চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। ছানিপড়া চালকদের দ্রুততর সময় অপারেশন করার উদ্যোগ নিতে হবে।
কর্মালায় বক্তারা বলেন, দেশের সড়ক, মহাসড়ক ও রাস্তার সংখ্যাসহ সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা যত বৃদ্ধি পাবে ততই দুর্ঘটনার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, প্রশমন ও প্রতিকারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় জাতীয় সেবা নম্বর ৯৯৯ এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার হাসপাতাল, উদ্ধাকারী দলের সঙ্গে দ্রুততর সময়ে যোগাযোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে হবে। দেশের সড়ক, মহাড়কে পাশে প্রতিষ্ঠিত ট্রমাসেন্টারগুলোকে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এর বাইরেও সেসব এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী টিম প্রস্তুত রাখতে হবে। এ টিমে সদস্য হিসেবে বিভিন্ন পেশার বিশেষ করে পরিশ্রমিক শ্রমিক, রিক্সাওয়ালা, দোকানদার, স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র ওছাত্রীদের অন্তর্ভুক্ত করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
কর্মশালায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিবাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. মো. আখতারুজ্জামান, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের ওর্য়াকিং মেম্বর ডা. এ এম জাকির হোসেন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (ক্যাজুয়ালিটি) ডা. রিভু রাজ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ অর্থপেডিক্সে সোসাইসিটর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোপেডিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিত কুমার কুন্ডু, ডিবিসি নিউজের এডিটর সাংবাদিক প্রণব সাহা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কমিউনিকেশন এক্সপার্ট সৈয়দ আশরাফ প্রমুখ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন আরটিআই প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ ইউনিট (সিআইপিআরবি) পরিচালক ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।