নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বর্তমানে দেশে ৩৫ বছর বা ততোর্দ্ধ ব্যাক্তিদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে ১৩ জন চোখের স্থায়ী অন্ধত্বজনিত রোগ গ্লুকোমা সমস্যায় ভুগছে। এরমধ্যে ৩ দশমিক ২ জন মারাত্মক ভাবে গ্লুকোমায় আক্রান্ত এবং ১০ জন সন্দেভাজহন রোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আর দেশে গ্লুকোমা আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ এবং সন্দেহভাজন রোগী ৫০ লাখ। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটি’র উদ্যোগে ২০২২ সালে দেশব্যাপী পরিচালিত এক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ গ্লুকোমা রোগের প্রকোপ ও সামাজিক প্রভাব শীর্ষক অনুষ্ঠানে জরিপ ফলাফল প্রকাশ করা হয়। জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গ্লুকোমা সোসাইটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. শেখ এমএ মান্নাফ।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, এশিয়া পাসেফিক অপথলমোলজির প্রেসিডন্টে অধ্যাপক ডা. আভা হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. দীন মোহাম্মাদ নূরল হক। গ্লুকোমা সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা সহীদ ও মহাসিচব অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয় গ্লুকোমা চোখের স্থায়ী অন্ধত্বের প্রধান কারণ। এ রোগে তেমন কোন উপসর্গ থাকে না বলে রোগী সমস্যা বুঝতে পারেনা। গ্লুকোমা রোগীদের চোখে উচ্চচাপ থাকে। চাপের ফলে চোখের নার্ভ ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। প্রথম দিকে চারপাশে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। কিন্তু কেন্দ্রিয় দৃষ্টি ভালো থাকে। রোগটিতে অন্ধত্ব বরণে করলে আর দৃষ্টি ফিরে পাওয়া যায় না।
জরিপের তথ্যে আরও জানানো হয় দেশে গত ২০ বছরে পূর্বের তুলনায় গ্লুকোমা রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। পুরুষদের তুলনায় নারীরা এই রোগটিতে বেশি আক্রান্ত হয়। অন্যান্য বিভাগের তুলনায় রাজধানী ঢাকায় এই গ্লুকোমা আক্রান্ত রোগীর হার অনেক বেশি।
জানানো হয়, জরিপটিতে সর্বমোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিলো ১২ হাজার জন, যেখানে পুরুষ ৫ হাজার ৯৫৩ জন এবং নারীর সংখ্যা ৬ হাজার ৪৭ জন। তাদের মধ্যে শহুরে মানুষ ৩ হাজার ৭৯০ জন এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ছিলেন ৯ হাজার ২১০ জন। জরিপে সর্বমোট ৩৮৬ জনের চোখে গ্লুকোমা শনাক্ত হয়েছে, যা শতকরা প্রায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, গ্লুকোমা শনাক্ত ৩৮৬ জনের মধ্যে ৩০৩টিতে প্রাইমারি ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা, যা প্রায় ৭৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়াও প্রাইমারি ক্লোজার গ্লুকোমা পাওয়া গেছে ৬২ জনের মধ্যে, যা শতকরা বিবেচনায় ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়াও বাকি ২১ জনের সেকেন্ডারি গ্লুকোমা (৫ দশমিক ৬ শতাংশ) পাওয়া গেছে।
অনুষ্ঠানে ডা. মান্নাফ বলেন, এর আগে দেশে গ্লুকোমা নিয়ে ২০০২ সালে একটা জরিপ হয়েছিলো, তখন দেশে গ্লুকোমা আক্রান্ত রোগী ছিলো ২ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২২ সালে আমরা যে জরিপ হয়েছি, সেখানে গ্লুকোমা রোগী পেয়েছি ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এমনকি শতকরা ১০ জন মানুষ পেয়েছি যারা গ্লুকোমা সন্দেহভাজন। তারা গ্লুকোমা আক্রান্ত হওয়ার পাইপলাইনে আছে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয় দেশে এই মুহূর্তে গ্লুকোমা রোগীর সংখ্যা ১৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৩০ জন। এরমধ্যে পুরুষ রোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৯০ জন এবং নারীর সংখ্যা ৭ লাখ ১৩ হাজার ৩৪০ জন। এছাড়াও গ্লুকোমা সন্দেহভাজন রোগী আছে ৫৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪৯৯ জন, যাদের মধ্যে পুরুষ ২৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৬৫ জন এবং নারী ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৫৩৪ জন।
জরিপে দেখা গেছে ঢাকায় এই রোগী বেশি। আবার লিঙ্গ বিবেচনায় নারীদের মধ্যে রোগটি বেশি পাওয়া গেছে। এমনকি বরিশালের পুরুষের মধ্যে কম এবং ময়মনসিংহের পুরুষদের মধ্যে রোগটি বেশি পেয়েছি। তবে নারীদের ক্ষেত্রে বরিশালে বেশি ও ময়মনসিংহে কম রয়েছে ।