চিকিৎসকদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত

আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দাবি কি ছিল?

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।। 

দিনভর নানা নাটকীয়তার পর অবেশেষে কমপ্লিট শাটডাউনের কর্মসূচি স্থগিত করেছেন চিকিৎসকরা। হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস পাওয়ায় ঘোষিত এ কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগমের আশ্বাসে কর্মবিরতি স্থগিত করে কাজে যোগ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর)  সারা দিন পর রাত আটটার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেছেন তাঁরা।

এর আগে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করা এবং কর্মস্থল নিরাপদ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি বলেন, চিকিৎসকদের দাবিদাওয়া যত দ্রুত সম্ভব পূরণ করা হবে। এ সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জমান বলেন, তাঁরা জরুরি সেবাসহ কিছু সেবা এখনই চালু করবেন।

আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখবেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে আলোচনা চলতে থাকে। রাত আটটার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকেরা কাজে যোগ দেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার রাতে তিন দফায় চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও মারধরের প্রতিবাদে রাতেই কাজ বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তখন থেকেই সেখানে চিকিৎসা সেবার অচলাবস্থা শুরু।

জানা গেছে, প্রথমে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল হট্টগোল হয়। মৃত শিক্ষার্থীর নাম আহসানুল ইসলাম (২৫)। আহসানুল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

পরবর্তী সময়ে বিষয়টি মেডিকেলে ছড়িয়ে পড়লে রোগীর স্বজনদের ডাক্তার ও মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং জরুরি গেট বন্ধ করে দেন।

চিকিৎসকরা অভিযোগ করেন, শনিবার রাতে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ৫০-৬০ জনের দল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জরি বিভাগের ইমারজেন্সি অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করে। তারা কোনও কথাবার্তা ছাড়া ডাক্তারদের এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে। দুই চিকিৎসককে বেদম পেটানো হয়েছে। এতে আহত হয় ৬-৭ জন। যারা হামলায় জড়িত ছিল তারা কেউ রোগীর আত্মীয় না। তারা চিকিৎসকদের মারতে মারতে পরিচালকের রুমে নিয়ে যায়।

এ চিকিৎসকরা অভিযোগ করেন, শনিবার রাতে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ৫০-৬০ জনের দল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জরি বিভাগের ইমারজেন্সি অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করে। তারা কোনও কথাবার্তা ছাড়া ডাক্তারদের এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে। দুই চিকিৎসককে বেদম পেটানো হয়েছে। এতে আহত হয় ৬-৭ জন। যারা হামলায় জড়িত ছিল তারা কেউ রোগীর আত্মীয় না। তারা চিকিৎসকদের মারতে মারতে পরিচালকের রুমে নিয়ে যায়।দিকে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রবিবার সকালের পর থেকে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখেন চিকিৎসকরা। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সারা দেশ থেকে আসা রোগীদের।

 বহির্বিভাগে সকাল থেকেই শত শত রোগী ফিরে গেছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, প্রচুর রোগী আসছেন, লাইনে দাঁড়িয়ে কিছু সময় টিকিট কিনেছেন। কেউ কেউ দেখাতে পারলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব ফাঁকা হয়ে যায়। অনেকে টিকিট কিনেও চিকিৎসা নিতে পারেননি। সেখানকার টিকিট বিক্রেতা জানান, তারা প্রতিদিন টিকিট বিক্রি করেন আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার। রবিবার টিকিট বিক্রি করেছেন দেড়শর মতো। তবে টিকিট নিয়েও চিকিৎসক দেখাতে পারেননি অনেকেই।

কামরাঙ্গীরচর থেকে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসেন হামিরন বেগম (৫০)। বলেন, সারা রাত কষ্টে ছটফট করেছি। সকালে চলে এসেছি হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসা নিতে না পেরে ১২টার পরে যাচ্ছি।

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা হেলেনা বেগম (৪৫) ডাক্তার দেখিয়েছেন গত সপ্তাহে। আজ রিপোর্ট দেখাতে এসে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছেন।

এদিকে চিকিৎসকদের দেওয়া ছাড়পত্র নিয়ে অনেক রোগী হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সরকারি পর্যায়ে দেশের সর্ববৃহৎ রেফারেল হাসপাতাল। ২৬০০ বেডের এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে চার হাজারের বেশি রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ মিলিয়ে দৈনিক আরও প্রায় পাঁচ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন এই হাসপাতালে।

হামলার বিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে আজ সকাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন চিকিৎসকেরা। পরে সব চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনায় বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। এরপর চিকিৎসকেরা সারা দেশে কর্মবিরতির ডাক দেন।

দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকের সামনে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। কর্মসূচির ঘোষণা দেন হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন আবদুল আহাদ। তিনি বলেন, সারা দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এই কর্মসূচির আওতাভুক্ত হবে।

এ ঘোষণার পর ঢাকা মেডিকেলে আসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। তিনি আন্দোলকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করে দাবিগুলো পূরণের আশ্বাস দেন। পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও রোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেনা, দুই প্লাটুন বিজিবি ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।

আন্দোলনরত চিকিৎসকদের চার দফা দাবি হলো—

১. হাসপাতালের মতো জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যেসব ব্যক্তি বা কুচক্রী মহল এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করা। দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে তাঁদের শাস্তির আওতায় আনা।

২. নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে অবিলম্বে দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পুলিশের (আমর্ড ফোর্স) মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

৩. নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে হাসপাতালে রোগীর ভিজিটর (ভিজিটর কার্ডধারী) ছাড়া বহিরাগত কাউকে কোনোভাবেই ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়া। বিষয়টি স্বাস্থ্য পুলিশের মাধ্যমে নিশ্চিত করা।

৪. হাসপাতালে রোগীর সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা-অসংগতি পরিলক্ষিত হলে, তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ আকারে জানানো। এভাবে শাস্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com