চমেক১৫০ শয্যার বার্ন ইউনিট প্রকল্প: প্রি-একনেকে উঠছে আজ

by glmmostofa@gmail.com

চট্টগ্রাম ব্যুরো :
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ আরও এক ধাপ এগোলো। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। রোববার (২৮ জানুয়ারি) প্রি-একনেক সভায় এ সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাস হবে। এরপর দ্রুততম সময়ের মধ্যে বার্ন ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

জানা গেছে, চমেক হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনে গত বছরের ১৩ মার্চ বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর গত দশ মাসে ইউনিট স্থাপনের জন্য ডিপিপি তৈরিসহ চূড়ান্ত প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) চমেক হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাজ অনেকটা গুছিয়ে নিয়ে এসেছি। কাল (রোববার) একটা প্রি-একনেক মিটিং হবে। সেখানে আমাদের ডিপিপি পাস হয়ে যাবে। আমার চাইনিজদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ আছে। ডিপিপিটা পাস হলেই আমরা দ্রুত কাজ শুরু করবো। ডিপিপি পাস হলেই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলব, যেন দ্রুত আমরা ১৫০ বেডের কাজটা শুরু করতে পারি।’

‘বার্ন ইউনিট নিয়ে আমি অনেকদিন ধরে যুদ্ধ করে আসছি। আমি এই মেডিকেল কলেজের ছাত্র। এটি আমার স্বপ্ন, এখানে যেন একটা বার্ন ইউনিট হয়। এটি হলে এখানকার অনেক মানুষের উপকার হবে। এখান থেকে অনেক রোগী ঢাকায় যায়, পথেই অনেকে মারা যায়। এখানে একটা আইসিইউ হবে, এইচডিইউ হবে, সবই হবে।’
গত বছরের মার্চে চীনের একটি প্রতিনিধি দল চমেক হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিল। সেসময় প্রতিনিধি দল ও চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, বার্ন ইউনিটটিতে ২টি আধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকবে, ১০টি নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) শয্যা এবং ২৫টি উচ্চ নির্ভরশীল ইউনিট (এইচডিইউ) শয্যা থাকবে।

চীনা সরকার হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ করবে এবং পোড়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য সব আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে এবং ইউনিটটি চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করবে।
৫০ বছর আগে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করেছিলেন সামন্তলাল সেন, সেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে শনিবার আসেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সকালে হাসপাতালে গিয়ে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর হাসপাতালে নতুন ৩০ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ডের উদ্বোধন করেন। এছাড়া হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা, নির্মাণাধীন ক্যানসার-কিডনি ও হৃদরোগ ভবন, ভেনম রিসার্চ সেন্টার পরিদর্শন করেন। এছাড়া মন্ত্রী চমেক হাসপাতাল প্রশাসন, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ চমেক আমাকে ডাক্তার বানিয়েছে, আমাকে এখানে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। আজ এখানে এসে আমি খুব গৌরবান্বিত বোধ করছি।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে দু’টো দায়িত্বকে আমি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসাটাকে উন্নত করতে হবে, এটা আমার প্রথম দায়িত্ব। কিন্তু চিকিৎসকদেরও সুরক্ষা দিতে হবে। রোগী মারা গেলে কথায় কথায় ভাঙচুর, চিকিৎসকদের ওপর হামলা- সেটি আমি কঠোরভাবে দেখব। আবার চিকিৎসকরাও যেন দায়িত্বে কোনো ধরনের অবহেলা না করেন সেটিও দেখব।’
গ্রামের হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকেরা কেন থাকেন না, সেটিও শুনতে হবে। দু’পক্ষের কথাই শুনতে হবে। থাকার পরিবেশটা তো তৈরি করতে হবে। থাকতে হবে, কিন্তু তাকে আগে থাকার মতো পরিবেশ, সুরক্ষাটা দিতে হবে। এরপরও যদি না থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চমেক হাসপাতালে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি প্রায়ই অচল থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মাত্র এসেছি। এখনও গুছিয়ে উঠতে পারিনি। মেডিকেলের পরিচালক মহোদয় আছেন, সচিব মহোদয় আছেন, ডিজি আছেন, সবার সঙ্গে আমি কথা বলব। সমস্যাটা কোথায় সেটা দেখে একটা সিদ্ধান্ত নেব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবনা অনুসারে প্রকল্পের জন্য ১১৮ মিলিয়ন ইউয়ান চীনের অর্থায়ন এবং প্রায় ৫১ কোটি ২২ লাখ টাকা সরকারি অর্থায়ন ব্যয় ধরে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া, প্রস্তাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ৩,৫০০ বর্গমিটার জমিতে অগ্নিদগ্ধদের জন্য উন্নত চিকিৎসা সুবিধাসহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ১৫০ শয্যার ইউনিট তৈরিতে ১,০৬৫ জনবলের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্যমতে, গত বছরের ২২ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ডিপিপি প্রেরণ করা হয়। আর গত ৩০ মার্চ চীন সরকারের সহায়তায় বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রকল্প মেয়াদ ২২ মাস। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ২০২৫ সালের শুরুতে বিশেষায়িত এই ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হবে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “প্রস্তাবিত জমিটি থেকে বসতি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন সীমানা দেওয়া হচ্ছে। চীন থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল আসবে মাটি পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি শিপমেন্ট করা হয়েছে চীন থেকে। ডিপিপি অনুমোদন পেলে নির্মাণকাজ শুরু হবে।
যা আছে প্রস্তাবে

ডিপিপিতে হাসপাতালের নকশা, যন্ত্রপাতির, ফার্নিচার, যানবাহন, প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্টেশনারি, প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত জনবলসহ ১৯টি বিষয়ের তালিকা প্রেরণ করা হয়।
এরমধ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ফার্নিচার চীন থেকে আনা হবে। পুরো প্রকল্পটি চীনের অর্থায়নে হবে। তবে প্রস্তাবিত জমির উন্নয়ন, সীমানা দেওয়াল, ড্রেনেজ সিস্টেম ও সড়ক উন্নয়নের জন্য ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা; নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীদের জন্য ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং চীন থেকে আসা যন্ত্রপাতিসহ জিসিপত্রের জন্য ৪০ কোটি টাকা কাস্টমস ব্যয় সরকার বহন করবে।
জনবলের তালিকায় ২ জন চিফ কনসালটেন্ট, ১০ জন সিনিয়র কনসালটেন্ট, ৮৭ জন কনসালটেন্ট, ১ জন সহকারী পরিচালক, ৪ জন আবাসিক সার্জন, ৯ জন রেজিস্ট্রার, ১৮ জন সহকারী রেজিস্ট্রার, ১১০ জন সহকারী সার্জন, ৩১০ জন নার্স, ৪ জন দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা, ৯২ জন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও ৪১৮ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছে।
যেসব সুবিধা থাকবে

৬ তলা ইউনিট ভবনের নিচতলায় থাকবে জরুরি ও বহির্বিভাগ।

দ্বিতীয় তলায় থাকবে ২৫টি আইসিইউ বেড। তৃতীয় তলার পুরোটাতেই থাকবে ২৫টি এইচডিইউ বেড।

চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় থাকবে সাধারণ ওয়ার্ড এবং ষষ্ঠ তলায় ওয়ার্ডের সঙ্গে থাকবে অফিস।এছাড়া, ইউনিটকে ঘিরে তৈরি তিনটি সড়ক তৈরি করা হবে।

সিএমএইচ-এর বর্তমান অবস্থা

চমেক হাসপাতালের ২৬ শয্যার বার্ন ইউনিটে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগের ৯টি জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষ নির্ভর করেন। ফলে অনেক বেশি রোগীর চাপ থাকে।

২৬ শয্যার ইউনিটে প্রতিদিন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া, জরুরি বিভাগে ২৫-৩০ জন এবং আউটডোরে ৩০-৪০ জন রোগী চিকিৎসা নেন প্রতিদিন।

১৯৫৭ সালের অপারেশন থিয়েটার দিয়েই চলছে হাসপাতাল; নেই কোনো আইসিইউ; রয়েছে শয্যা সংকটও। হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে থাকেন অনেক রোগী। ইনফেকশন কন্ট্রোলের কোনো ব্যবস্থাও নেই।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com