নিজস্ব প্রতিবেদক।।
গ্লুকোমা হলো চোখের একটি জটিল রোগ । যা চোখের স্নায়ু ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি কমে যায়। আর বিশ্বজুড়ে মানুষের অন্ধত্বের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো চোখের গ্লুকোমাজনিত সমস্যা। প্রথমটি ছানি রোগ। ছানি রোগের অন্ধত্ব সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা যায়। কিন্তু গ্লুকোমাজনিত অন্ধত্ব নিরাময় করা যায় না। রোগটির প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন উপসর্গ না থাকায় রোগী নিজে বুঝতে পারেন না, যে তিনি ধীরে ধীরে অন্ধত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার পরে সাধারণত রোগী বুঝতে পারেন। দেশের ১০ শতাংশ মানুষের গ্লুকোমা হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এই মহূর্তে দেশে গ্লুকোমা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৫ লাখ ৫০ হাজার। এরমধ্যে ১৮ লাখ রোগী চিকিৎসার বাইরে রয়েছে।
বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডির এক হোটেলে ‘বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটি’ (বিজিএস) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানান। ওয়ার্ল্ড গ্লুকোমা অ্যাসোসিয়েশন এবছর বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহের (১০-১৬ই মার্চ) প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করছেÑ ‘একসাথে হাত ধরি গ্লুকোমা মুক্ত বিশ্ব গড়ি’। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন অ্যারিস্টোফার্মা লিমিটেড।
গ্লুকোমা সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা সহীদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ১০ আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ, এশিয়া প্যাসিফিক একাডেমি অফ অফথালমোলজি’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. আভা হোসেন, অফথালমোলজিক্যাল সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (ওএসবি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, ওএসবি’র মহসচিব অধ্যাপক ডা. দীপক কুমার নাগ, বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. শেখ এমএ মান্নাফ ও অধ্যাপক ডা. এম নজরুল ইসলাম সহ প্রমুখ।
আলোচনা সভায় জানানো হয়, দেশে ৩৫ বছরের বেশি ৫২ হাজার মানুষের মধ্যে করা এক জরিপে দেখা গেছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ গ্লুকোমা রয়েছে। ২০২১-২০২২ সালে ৬৫ উপজেলায় এ জরিপটি করা হয়।
জরিপে দেখা গেছে, গ্রামের তুলনায় শহরে গ্লুকোমার প্রবণতা বেশি। দুই ধরণের গ্লুকোমা প্রবণতা বেশি, নারীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ন্যারো-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা। পুরুষদের মধ্যে ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমার হার বেশি। নারীদের ন্যারো-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমার হার ৬ শতাংশ ও পুরষদের ১ দশমিক ৫ শতাংশ। ন্যারো-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা মুলত চোখের ছানি এবং দূর দৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা পুরুষদের ৫ শতাংশ ও নারীদের ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা অপটিক স্নায়ুকে প্রভাবিত করে এবং সাধারণত পেরিফেরাল দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে হারানোর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
চিকিৎসকরা আরও বলেন, মূলত চোখের অভ্যন্তরীণ উচ্চ চাপের কারণে গ্লুকামা হয়। এই রোগে একবার দৃষ্টি যতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তা আর ফিরিয়ে আনা যায় চোখে গ্লুকোমা হলে রোগীকে সারা জীবন চিকিৎসকের ফলোআপে থাকতে হয়।
রোগটির পারিবারিক ইতিহাস, বয়স চল্লিশের বেশি হলে, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড সেবন করলে, চোখের অন্যান্য রোগ ও জন্মগত চোখের ক্রুটি থাকলে গ্লুকোমার ঝুঁকি বাড়ে। এক্ষেত্রে কেবল চোখের উচ্চ চাপই ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। লেজার চিকিৎসা সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। আর গ্লুকোমা এক নীরব ঘাতক হলেও প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নেওয়া গেলেও পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।