গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: বেশির ভাগই উৎসুক জনতা

৮ থেকে ১০ জনের অবস্থা আংশকাজনক : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

by glmmostofa@gmail.com

গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: বেশির ভাগই উৎসুক জন

নিজস্ব প্রতিবেদক
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচলা এলাকায় সিলিন্ডারের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাসে আগুন লেগে অন্তত ৩৬ জন দগ্ধ হয়েছেন। বুধবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। গ্যাসের আগুনে এত বেশি মানুষের দগ্ধ হওয়ার পেছনে কৌতূহলী হয়ে ভিড় জমানোর তথ্য মিলেছে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তেলিরচালা টপস্টার কারখানার পাশে শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী জমি ভাড়া নিয়ে কলোনি তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন। ওই বাড়িতে থাকা সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে গেলে পাশের একটি দোকান থেকে শফিকুল নিজেই একটি গ্যাস সিলিন্ডার কিনে আনেন। সেই সিলিন্ডার লাগানোর সময় সিলিন্ডারের চাবি খুলে গিয়ে পাশের চুলা থেকে আগুন ধরে যায়। এ সময় আশপাশের উৎসুক নারী, পুরুষ ও শিশুদের শরীরে আগুন লেগে যায়।
কলোনির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তেলিরচালা এলাকার শফিকুল ইসলাম শফিক তার বাসার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার আনেন। সেটি চুলার সঙ্গে লাগানোর সময় গ্যাস বের হতে থাকে। একপর্যায়ে এটিকে বাইরে রাস্তায় ফেলে দেন। সেখানে একটি মাটির চুলার আগুন সিলিন্ডারে লেগে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে রাস্তায় ও আশপাশে থাকা ৩৫ জন দগ্ধ হন। পরে আশপাশের লোকজন আগুন নিভিয়ে তাদের উদ্ধার করে কোনাবাড়ী এলাকার কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে তাঁদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

দগ্ধ পোশাক শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, “তেলিরচালা এলাকায় একটি বাসায় গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে শো শো শব্দে গ্যাস বের হচ্ছিল। এরপর বাড়ির লোকজন সেই সিলিন্ডারটি গলির মধ্যে ফেলে যায়।“ইফতারের আগে ওই গলিতে যখন অনেক লোকজন চলাচল করছিল ঠিক সেই সময় আগুন লাগে। সেই আগুনে গলিতে অবস্থানকারী ও চলাচলরত লোকজন দগ্ধ হয়।”

নিজে তখন ওই গলির রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানান রফিকুল।

চিকিৎসাধীন আরিফুল ইসলাম বলেন, ওই গলি দিয়ে যাতায়াত করা প্রায় সবাই কম-বেশি দগ্ধ হয়।
শুরুতে বিস্ফোরণের কথা বলা হলেও পরে ফায়ার সার্ভিস ও বার্ন ইনস্টিটিউটের এক চিকিৎসক জানান, একটা ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হচ্ছিল। বাসার মালিক সেটি বাইরে রেখে গেলে সেটি ঘিরে কিছু উৎসুক লোকজন দাঁড়িয়েছিল। এ সময়েই পাশের আরেকটি বাসায় চুলা ধরাতে গেলে পুরো রাস্তায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতেই তারা সবাই দগ্ধ হয়।
ওই ঘটনায় পোশাক কারখানার শ্রমিক মো. তারেকের কোমরের নীচ থেকে দুই পা পুড়ে গেছে। তারেক বলছেন, কারখানা থেকে ফিরে হইচই ফোনে বাইরে গিয়ে দেখেন গলির মধ্যে একটি সিলিন্ডারে ভেজা চট পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে সশব্দে গ্যাস বেরোচ্ছে। সেটি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তখন সিলিন্ডারে ঘিরে বেশ কয়েকজনকে দেখতে পান তিনি।
ফেরার জন্য কয়েক কদম গিয়েছেন, সে সময় আগুন ধরে যায়। এ সময় আশপাশে যারা ছিলেন তারা মারাত্মকভাবে ঝলসে গেছেন।
এলাকাটি পোশাক কর্মীসহ নিম্ন আয়ের মানুষের বাস। অনেকটা বস্তির আদলে গায়ে গা লাগিয়ে টিনশেড ঘর বলে জানাচ্ছেন তারেক। এই ঘরগুলোতে ভাড়া থাকেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, তাঁদের পাশের বাড়িতে একটি সিলিন্ডার ছিদ্র হয়ে গ্যাস বের হচ্ছে, এ খবর পেয়ে সেখানে লোকজন জড়ো হন। একপর্যায়ে আগুন ধরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে থাকা ওই ৩৬ জন দগ্ধ হন।
বাড়ির মালিক শফিকুল ইসলাম জানান, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়নি। সিলিন্ডারের ত্রুটির কারণে গ্যাস বের হতে থাকে। হঠাৎ পাশের চুলা থেকে সিলিন্ডারে আগুন ধরে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুরের কোনাবাড়ী কলেজের উল্টো পাশে টপস্টার কারখানা। ওই কারখানার পশ্চিম পাশে টিনের বেড়া দিয়েছে গড়ে উঠেছে শতাধিক ঘরবাড়ি। সেখানে বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকেরা বসবাস করেন। ওই বাড়িতে থাকা সিলিন্ডারের গ্যাসের ছিদ্র থেকে আগুন ধরে যায়। ঘটনার পর থেকে সেখানে ভিড় করতে থাকেন মানুষ।
গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত উল্লেখ করে কোনাবাড়ী মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার আশরাফ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে কাউকে পাইনি আমরা। শুনেছি অনেকে দগ্ধ হয়েছেন। তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তথ্য সংগ্রহ করছি, পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর মধ্যে ৩৪ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সহকারী পরিচালক হোসাইন ইমাম ইমু জানান, গাজিপুর থেকে নারী শিশু সহ ৩৪ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে আসছে। এদের মধ্যে ১৬অবস্থা আংশকাজনক। বাকিদের অবস্থাও শংঙ্কামুক্ত না। এদের মধ্যে ৫ জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক সাইফুল আলম বলেন, দগ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
খবর পেয়ে রাত আটটার দিকে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ, কালিয়াকৈর থানার ওসি এ এফ এম নাসিমসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
কালিয়াকৈর থানার ওসি এ এফ এম নাসিম বলেন, স্থানীয় দোকান থেকে সিলিন্ডার পরিবর্তন করে নিয়ে এসে লাগানোর সময় পাশের চুলা থেকে আগুন ধরে যায়। আগুনে দগ্ধ হয়ে ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। ঘটনাটির তদন্ত করা হবে। এতে কারও গাফিলতি থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর পেয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ছুটে আসেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। তিনি চিকিৎসকদের দগ্ধ ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসাধীন কেউই শঙ্কামুক্ত নন। তাঁদের মধ্যে ৮ থেকে ১০ জনের অবস্থা খুবই খারাপ। কারও ৯০ শতাংশ, কারও ১০০ শতাংশই পুড়ে গেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অগ্নিদগ্ধ সাতটি শিশুর কেউই শঙ্কামুক্ত নয়। সবারই শ্বাসনালি পুড়েছে। পোড়া রোগীদের জন্য সরকারের যা করার দরকার সবই করা হবে।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com