নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হারও। বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন নারীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার দ্রুত শনাক্ত ও প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি সুচিকিৎসা গ্রহণ করলে এ ক্যানসারে আক্রান্ত ৯৫ শতাংশ রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এই অস্ত্রোপচারে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। সেখানে মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় ৫০ জন রোগীকে অস্ত্রোপচারের সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম।
সোমবার দুপুরে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের গেরিলা কমান্ডার মেজর হায়দার বীর উত্তম মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের উদ্যোগে ২০১৩ সাল থেকে ১০ অক্টোবর স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় ও সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ এই কার্যক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য। ঢাকা ও সারাদেশের জেলা-উপজেলায় গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রা ও সহজ বাংলায় প্রয়োজনীয় তথ্যসমৃদ্ধ লিফলেট বিতরণ ইতোমধ্যে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। এ বছর ফোরামের ৪৬টি সংগঠন যৌথভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর বাইরে বিভিন্ন সংগঠন এককভাবে কর্মসূচি পালন করবে।
এর অংশ হিসেবে স্তন ক্যানসারের বিষয়ে জনমত গঠন ও সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে ফোরামের সদস্য সংগঠন কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্ট ও রোটারি ক্লাব অব ঢাকা গোল্ডেন সিটি প্রতীকী খরচে দরিদ্র রোগীদের স্তন ক্যানসার অপারেশনে সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে রোগী মাত্র পাঁচ হাজার টাকা (বেড ভাড়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য) পরিশোধ করবে। ২৫ হাজার টাকা কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন অনুদান সহায়তা হিসেবে দেবে। গণস্বাস্থ্য মাত্র ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ করবে হাসপাতাল ও সার্জন ফি বাবদ। কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্ট ১৫ জনকে সহায়তা দেবে। অন্যান্য সংগঠন ও ব্যক্তির সহায়তায় অন্তত ৫০ জনকে সহায়তা দেওয়া হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
দেশের বিত্তবান ও হৃদয়বান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ মহৎ উদ্যোগে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা।
এ সময় ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী এবং গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যানসার হাসপাতালের প্রকল্প সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন আজ থেকে ১৫০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ রোগী (শর্ত হলো প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত, দ্রুত অস্ত্রোপচার, বায়োপসি শেষে কেমো থেরাপি কিংবা রেডিওথেরাপি প্রদান) সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। তবে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৪ শতাংশ মারাত্মক ধরনের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। বিলম্বিত চিকিৎসার কারণে তাদের বাঁচানো সম্ভব হয় না।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রখ্যাত প্রজনন ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. হালিদা হানুম আখতার, সিওসি ট্রাস্টের প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব আবুল কালাম আজাদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সয়েফ উদ্দিন সপু প্রমুখ বক্তব্য দেন।