নিজস্ব প্রতিবেদক।।
দাদীর সাথে আইসক্রিম কিনতে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন সাত বছরের শিশু মুসা।এক সময় বাচাঁর আশা ছেড়ে দিয়েছিল তার পরিবারের সদস্যরা, এক রকম মৃত ভেবে দাফন-কাফনের প্রস্তুতির কথাও বলছিল স্বজনদের কেউ কেউ। তবে সেই সময়েও হাল ছাড়েনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণকারি কর্মী ও চিকিসৎকরা।
আহত গুলিবিদ্ধ মুসাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। অবশেষে চার মাস পর আহত সেই শিশু আস্তে আস্তে চোখ খুলেছে, হাত-পা নাড়তে শুরু করেছে। একই সঙ্গে উঠে বসতেও পারছে সে। এতে মুসাকে নিয়ে আবারও আশার আলো দেখছে পরিবার।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) শিশু মুসার অলৌকিকভাবে ফিরে আসার গল্পের কথা জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য শাহরিয়ার মাহমুদ ইয়ামিন।
জানা গেছে, মুস্তাফিজুর রহমান ও নিশামনি দম্পতির একমাত্র সন্তান বাসিত খান মুসা। পরিবারটির বসবাস রাজধানীর রামপুরার মেরাদিয়া হাট এলাকায়। মালিবাগে মুসার বাবা ও দাদার ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান আছে। গত ১৯ জুলাই মেরাদিয়া হাট এলাকায় নিজ বাসার নিচে মুসাকে আইসক্রিম কিনে দিতে নেমে নাতিসহ দাদি মায়া ইসলাম (৬০) গুলিবিদ্ধ হন। মায়া ইসলাম পরদিন মারা যান।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শুরুতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে ঢাকা মেডিকেল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় তাকে গত ২২ অক্টোবর এয়ার এম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়।
শাহরিয়ার মাহমুদ ইয়ামিন বলেন, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন মুসা হাত-পা নাড়ছে, চোখ খুলছে, বসতে পারছে। এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে। আমার চোখে-মুখে কী পরিমাণ আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। মুসা চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে ছোট যোদ্ধা। এক বুলেট তার দাদির পেটের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে মুসার মাথায় লেগেছিল। দাদি স্পট ডেট হলেও এখনো মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বেঁচে আছে মুসা। এখনো তার বেঁচে থাকাটা এক অলৌকিক ঘটনা।
তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে গিয়ে শুরুতেই করোনা পজিটিভ ধরা পড়ছিল। এটা শুনে রীতিমতো কান্না আসছিল আমার। পরে করোনা থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে পুরোদমে চিকিৎসা শুরু হয় এবং এখন আগের চেয়ে উন্নত। মুসাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর পেছনে দৌড়ঝাঁপ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। মুসাকে কেন আল্লাহ এখনো বাঁচিয়ে রাখছেন তা একমাত্র তিনিই ভালো জানেন। কোনোভাবেই যেন তার চিকিৎসা ব্যাহত না হয়, সেদিকে সরকার সর্বোচ্চ নজর রাখছে। মুসা ফিরে আসুক সুস্থ হয়ে।
শাহরিয়ার মাহমুদ ইয়ামিন আরও বলেন, সরকার প্রথম ধাপে অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ ছাড়া মুসার জন্য এককালীন এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও এক কোটি টাকা পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এছাড়াও সরকারি খরচে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা চলছে তিন জনের।