করোনাকালে ৯০ শতাংশ কর্মজীবী নারী ক্ষতিগ্রস্ত: গবেষণা

স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা বেড়েছে ২৯ শতাংশ

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

মহামারি করোনার কারণে নারী-পুরুষ উভয়ের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক সুস্থতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে মহামারীর সময়ে বস্তি ও কারখানায় কর্মরত নারীরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে পড়েছিলেন- যেমন মহামারীর সময় সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে খরচের চাপে তাকে কানের দুল বিক্রি করতে হয়েছে এবং ঋণ নিতে হয়েছে, যার ফলে তার মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও শহুরে স্বাস্থ্যসেবায় অনেক ধরনের ফাঁকফোকর ছিল। এর পরোক্ষ প্রভাব হিসেবে কর্মসংস্থান কমেছে এবং খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। গবেষণা দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশের বেশি কর্মজীবী নারী অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, যা মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে।

বুধবার রাজধানীর মহাখালীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) আয়োজিত সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত  ‘ওম্যান রাইজ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রকাশিত গবেষণা ফলাফলে এমন চিত্র উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশের শহরের অনানুষ্ঠানিক বসতিগুলিতে বসবাসকারী কর্মজীবী মহিলাদের মধ্যে বৈশ্বিক মহামারী প্রস্তুতির জন্য সিস্টেম শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক এই সেমিনারে সহযোগিতা করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং কানাডার সিককিডস। গবেষণা পরিচালনা করেছে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি। আর এই গবেষণায় আর্থিক সহায়তা দিয়েছে কানাডার ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার।গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বির গবেষক ডা. সোহানা শফিক।

ঢাকা ও গাজীপুরে আইসিডিডিআর,বি-র আরবান হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সারভেইল্যান্স সিস্টেম সাইট এবং গাজীপুরের ছয়টি তৈরি পোশাক কারখানায় এই গবেষণা চালানো হয়। সেমিনারে নীতিগত সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও নীতিনির্ধারকরা আলোচনায় অংশ নেন।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, মহামারি মোকাবিলায় হস্তক্ষেপমূলক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ কীভাবে ছড়ায় তা নিয়ে নারীদের মধ্যে গড়ে ২৯ শতাংশের বেশি সচেতনতা বেড়েছে। এ হার অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের মধ্যে প্রায় ৩৬ শতাংশ। করোনার লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ; তার মধ্যে পোশাক কারখানায় কর্মরত নারীদের মধ্যে এ বৃদ্ধি প্রায় ৩২ শতাংশ আর বস্তির গৃহকর্মীদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; এতে আনুষ্ঠানিক খাতের ১৮ শতাংশ এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের ২৩ শতাংশ কর্মী উপকৃত হয়েছেন। হাত ধোয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জ্ঞানও আনুষ্ঠানিক খাতের প্রাং ২৫ শতাংশ এবং অনানুষ্ঠানিক খাতে প্রায় ২৮ শতাংশ কর্মীদের মধ্যে বেড়েছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অনুশীলনও সামগ্রিকভাবে ১৬ শতাংশ উন্নতি হয়েছে, যা আনুষ্ঠানিক খাতের ১৭  শতাংশ এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের ১৫ শতাংশ উভয় ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান। কর্মজীবী নারীদের মধ্যে খাদ্যের বৈচিত্র্য সামগ্রিকভাবে প্রায় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে আনুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের মধ্যে এটি বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষণা ফলাফলে বলা হয়, নারীদের নানা ধরনের সমস্যা এখনো প্রকট। এর মধ্যেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী নিবন্ধন সম্পর্কে অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জ্ঞান ১৬ শতাংশের বেশি  বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা পরিষেবা সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে ২৩ শতাংশের বেশি জ্ঞান বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আনুষ্ঠানিক খাতের প্রায় ১৬ শতাংশ এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের ২৯ শতাংশ কর্মীদের মধ্যেই দেখা গেছে।

গবেষণার বিষয়ে ডা. সোহানা শফিক বলেন, গার্মেন্টস খাতে কর্মরত নারীরা তুলনামূলকভাবে কিছু সুবিধা পেলেও মানসিক চাপ, স্বাস্থ্যসেবা সীমাবদ্ধতা এবং ছাঁটাইয়ের ঝুঁকির কারণে তারাও ক্ষতির বাইরে ছিলেন না। এই গবেষণার এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, সীমিত সম্পদের শহুরে পরিবেশে জেন্ডার, কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্যের পারস্পরিক প্রভাব বোঝা। মহামারী প্রতিরোধের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি বিশেষ কৌশল তৈরি ও তার কার্যকারিতা মূল্যায়নে সিস্টেম থিংকিং এবং জেন্ডার-সংবেদনশীল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এই গবেষণার ফলাফল আমাদের সবাইকে ভবিষ্যতের যেকোনো মহামারীর জন্য প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে। আমাদের সতর্ক হওয়া উচিৎ, কারণ কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা আবারও বাড়ছে।তবে এটি আমাদের চলমান কাজগুলোকে আরও পরিশুদ্ধ ও সমৃদ্ধ করারও একটি সুযোগ।

সেমিনারে -স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী এবংনারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ও আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. হালিদা হানুম আখতারসহ আরও অনেকে আরও উপস্থিত ছিলেন।

 

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com