নিজস্ব প্রতিবেদক।।
শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর আলোচিত ও সমালোচিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এবার হেনস্তা ও মারধরের শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা ও মোবাইলসহ ব্যবহৃত সরঞ্জাম কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।হামলার শিকার দুই সাংবাদিক হলেন, বাংলাদেশ টাইমসের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার ইমরান হোসেন ও দৈনিক আমার সংবাদ পত্রিকার রিপোর্টার মিরাজ উদ্দিন।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বেলা পৌনে ৩টার দিকে বাড্ডা সাঁতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক ইমরান হোসেন বলেন, যেহেতু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে, তাই আমরা ওখানে গিয়েছিলাম হাসপাতালের বর্তমান কার্যক্রম চলছে কি না তা জানার জন্য। এছাড়া, রোগীদের কী অবস্থা, তাদের দুর্ভোগ হচ্ছে কি না— এসব বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলাম।তিনি বলেন, হাসপাতালে সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলে কিছুটা দূরে গিয়ে লাইভে সেখানকার চিত্রটা তুলে ধরছিলাম। হুট করে পাঁচ-সাতজন সিকিউরিটি গার্ড এসে আমাদের থেকে মোবাইলসহ সবকিছু কেড়ে নেয় এবং বলে এখানে কোনো লাইভ করা যাবে না। তারা ক্যামেরাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম যেগুলো ছিল সেগুলো ভাঙচুর করেছে। সেগুলো আমরা উদ্ধার করতে গেলে আমাদেরকে মারধর করেছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফুল হক বলেন, হাসপাতালে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওরা হাসপাতালে অনুমতি ছাড়াই ঢুকেছিল, এমনকি তারা সাংবাদিক বলেও কোনো পরিচয় দেয়নি। যে কারণে আমাদের সিকিউরিটি গার্ড যারা রয়েছে, তারা সাময়িক সময়ের জন্য তাদেরকে আটকে রেখেছিল। খবর পেয়ে আমি দ্রুত যাই এবং তাদেরকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করি। এই ঘটনায় রাজধানীর বাড্ডার থানায় অভিযোগ করেছেন আহত দুই সাংবাদিক।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর সেবাদান বন্ধ রাখা হয়েছে এবং আগের ভর্তি হওয়া সব রোগীকে রিলিজ বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে মেডিকেল কলেজ শাখার সকল কার্য়ক্রম চালু রয়েছে।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) ইউনাইটেড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফুল হক এই তথ্য জানান।
তিনি জানান, আমরা সাঁতারকুলশাখার সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। জরুরী বহি: বিভাগে কোন রোগী চিকৎেসা দেওয়া হচ্ছে না। আর হাসপাতালে যে সকল রোগী ভর্তি ছিল তারা সবাই সুস্থ হওয়ার পথে ছিল তাই তাদেরকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। রোগীদের অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হয়নি।
আরিফুল হক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আমরা আজ সোমবার থেকে সাঁতারকুল ইউনাইটেড হাসপাতাল শাখার সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। তবে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ চালু আছে। এছাড়াও গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালেরও সকল কার্যক্রম চালু আছে। আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা দেখছি গুলশান শাখার ইউনাইটেড হসপিটাল বন্ধ হয়ে গেছে, যা সঠিক নয়।
এর আগে লাইসেন্স নবায়ন না থাকায় হাসপাতালটির কার্যক্রমবন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই আদেশ বলবৎ থাকবে। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। হাসপাতালটিতে পরিদর্শনে গিয়ে ওই হাসপাতালের লাইসেন্সসহ জরুরি কাগজপত্র পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে।
ওই অফিস আদেশে বলা হয়, সাম্প্রতিককালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের (৫+ বছর) মৃত্যুতে তার বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের পরিচালকের (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) নেতৃত্বে ১০ জানুয়ারি হাসপাতালটি পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রদত্ত লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয়।
এছাড়া দপ্তরের অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা এবং পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় যে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে কোন প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিকট নিবন্ধন/লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য কখনোই অনলাইন আবেদন করেনি। প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রকার আইনানুগ নিবন্ধন অথবা লাইসেন্স ব্যতিরেকে চিকিৎসা সেবা নির্মাণাধীন ভবনে পরিচালনা করে আসছে, যা সরকারের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে এ আদেশ জারি করা হলো।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খৎনা করাতে সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের নার্সারির শিক্ষার্থী শিশু আয়ানকে। এ সময় তাকে ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে খৎনা করা হয়।
পরে অপারেশনের কয়েক ঘণ্টা পরও জ্ঞান না ফিরলে আয়ানকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ৮ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর রোববার (৭ জানুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে আয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পরে তাকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দাফন করা হয়।