অটিজম রোগের প্রাথমিক লক্ষণ ও করণীয়

by glmmostofa@gmail.com

নিউজ ডেস্ক।।

প্রথমেই জেনে নেই- অটিজম কি?  উত্তর হলো অটিজম হলো- শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা। যেখানে শিশুদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ, আচরণ, কল্পনা ইত্যাদি ক্ষেত্রসমূহে বেশ সমস্যা লক্ষ করা যায়। বিশেষজ্ঞরা একে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (এএসডি) বলেন।

নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার হলো মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় স্নায়বিক সংবেদনশীলতার বিকাশজনিত প্রতিবন্ধকতা। এটি এমন একটি মস্তিষ্কের ব্যাধি, যা আবেগ, কিছু শেখার ক্ষমতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, স্মরণশক্তি ও সামাজিক বিকাশকে ব্যাহত করে। যেমন– বুদ্ধিগত প্রতিবন্ধকতা, অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার, অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার একটিভ ডিসঅর্ডার, সেরিব্রাল পালসি, সিজার ডিসঅর্ডার বা খিঁচুনি।অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারও এক ধরনের নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার। এ ধরনের সমস্যা থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সামাজিক সম্পর্ক, যোগাযোগ এবং আচরণের পরিবর্তনই প্রধান বিষয়। শারীরিক গঠনের কোনো সমস্যা বা ত্রুটি তাদের থাকে না এবং চেহারা বা অবয়ব অন্যান্য সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের মতোই হয়ে থাকে।

অটিজমে আক্রান্ত রোগীর পক্ষে শব্দ, অঙ্গভঙ্গি, মুখের অভিব্যক্তি এবং স্পর্শের মাধ্যমে নিজের ভাব প্রকাশ করা কঠিন। পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন জিনিস শেখার ক্ষেত্রেও হয় সমস্যা। কখনও আক্রান্তের দক্ষতা অসম ভাবে বিকশিত হয়। যেমন— কথোপকথনে সমস্যা হলেও সংগীত, গণিত, স্মৃতি বা কোনো নির্দিষ্ট শিল্পে রোগী অস্বাভাবিক রকম ভালো হতে পারে।

অটিজম রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো—

শিশুদের বৃদ্ধির একাধিক স্তর থাকে। দৈহিক বৃদ্ধির সঙ্গে সামাজিক বৃদ্ধিও একটি স্তর। এ সময় শিশু মাকে দেখে হাসে, কোনো কিছুর দিকে আকার ইঙ্গিতে নির্দেশ করে কিংবা শিশুর শব্দস্ফুরণ হয়।সমাজে চলতে শেখার শুরুর প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হওয়াও অটিজমের লক্ষণ। কারও সঙ্গে মেলামেশা না করা, অনেক খেলনার মাঝে কেবল একটি খেলনা নিয়ে খেলা, নতুন কিছুতে আগ্রহ না দেখানো, নাম ধরে ডাকলে সারা না দেওয়া বা একটানা আপন মনে থাকার মতো লক্ষণ এ রোগের প্রাথমিক উপসর্গ।

গবেষণায় জানা গেছে, অটিজম সাধারণত মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে চারগুণ বেশি দেখা যায়।অটিজমের সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। বিশ্বে প্রতি ১১০ জনে ১ জন শিশু এ সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে অটিজমের হার প্রায় ০.৮ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি হাজারে ৮ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন রোগ শনাক্তকরণের পদ্ধতিতে অটিজমকে একটি ব্যাপক বিকাশজনিত সমস্যা হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।অটিজম থাকলে শিশু তার পরিবেশের সঙ্গে যথাযথভাবে যোগাযোগ করতে পারে না। যেমন– ভাষার ব্যবহার রপ্ত করতে পারে না, নিজের ভেতর গুটিয়ে থাকে, সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না, আচরণের সমস্যা দেখা দেয় এবং একই কাজ বা আচরণ বারবার করতে থাকে বা হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এ লক্ষণগুলো সাধারণত তিন বছর বয়সের মধ্যে দেখা যায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে আরেকটু পরেও দেখা দিতে পারে। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, ওপরের কোনো লক্ষণ অল্প সময়ের জন্য কোনো শিশুর মধ্যে থাকলেই ধরে নেওয়া যাবে না যে তার অটিজম আছে। তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। কেবল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলতে পারবেন শিশুটির অটিজম আছে কিনা। শিশু বিশেষজ্ঞ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ বা অটিজমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকই অটিজম নির্ণয় করবেন। তাই এ ধরনের চিকিৎসকের মতামত পাওয়ার আগে কোনো শিশুর অটিজম আছে– এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের করণীয় অনেক বেশি। অটিজম শনাক্ত হলে অভিভাবকরা লক্ষণগুলো গোপন করবেন না, হতাশ হবেন না। এ সময়ে অনেকে অনেক কথা বলবেন, তাই অভিভাবকদের অযথা বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকতে হবে। পরিবারের সদস্যরা মিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, ধৈর্য ধরুন। শিশুকে সামাজিকতা শিক্ষা দিন, শিশুর সঙ্গে খেলুন, শিশুকে খেলতে দিন, শিশুকে ভাষা শেখান। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশুকে ব্যক্তিগত কাজগুলো করার যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলুন। দ্রুত শনাক্তকরণ ও যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এ শিশুরাও অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।  ইন-সার্ভিস ট্রেনিং, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর -তথ্যসূত্র।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com